আর দু’দিন বাদেই বেজে উঠবে দিল্লি দখলের পাঞ্চজন্য। ২৩শে মে শেষ হবে ভোটের লড়াই। বাংলাদেশে ডিসেম্বরের ৩০শে হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরাট বিজয় অর্জন করে। সম্প্রতি বেশ কিছু মিল দেখা যাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে, যা হয়তো কাকতালীয় কিন্তু নজর কেড়েছে পর্যবেক্ষকদের।
ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই বাজারে আসতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র ‘পিএম নরেন্দ্র মোদী’। ১২ এপ্রিল তা মুক্তি পাবে। ভারতে সাত দফা ভোটে এই জীবনীচিত্র কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখর মিডিয়া। বাংলাদেশেও জাতীয় নির্বাচনের ঠিক মুখে ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, যার উপজীব্য ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের দুঃখ-বিষাদ, ব্যক্তিগত আখ্যান ও নৈকট্যের কাহিনি। স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমাটি রাজনীতির মাঠে জনসংযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল ভোটের আগে আবেগি বাঙালিকে আরও বেশি শেখ হাসিনার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া। সন্দেহ নেই ভারতে বিবেক ওবেরয় অভিনীত ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’ বাজারে আনার উদ্দেশ্যও মোদীকে ভোটারদের কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়া।
কেবল কি জীবনী-চিত্র দিয়ে ভোটারদের মন জয়? আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে হাসিনার আরও একটি কৌশলও যেন অনুসরণ করছেন মোদী। চলচ্চিত্র তারকাদের কাছে টানা। রুপোলি জগতের তারকা, তথা জননন্দিত অভিনেতাদের প্রতি জনতার কৌতূহল স্বভাবগত। সেটাকে পুঁজি করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টাতেও মোদি ও হাসিনার মধ্যে বেশ মিল। সম্প্রতি একঝাঁক বলিউড তারকার সঙ্গে মিলিত হন মোদী। ছিলেন কর্ণ জোহর, রণবীর সিংহ, রণবীর কপূর, আলিয়া ভট্ট, ভিকি কৌশল, সিদ্ধার্থ মলহোত্র, বরুণ ধবন, রোহিত শেট্টিরা। তারকা বেষ্টিত মোদীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল। যা মনে করিয়ে দেয়, আওয়ামি লিগের নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশের জননন্দিত অভিনেতা-অভিনেত্রী ফেরদৌস, সুবর্ণা মোস্তফা, শমী কায়সার প্রমুখ খ্যাতিমান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপস্থিতি। ভোটের আগে শেখ হাসিনার শিবিরে যুক্ত হয়েছিলেন ক্রিকেট তারকা মাশরাফি। তার পরে ভারতীয় ক্রিকেট তারকা গৌতম গম্ভীরের মোদী শিবিরে যোগ দেওয়ার তাজা খবর বাংলাদেশকে অবাক করেনি। রসিকদের প্রশ্ন, এ-ও কি হাসিনার দেখানো পথেই?
গত নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বার বার ঘোষণা করেছিলেন, তিনি দেশের ‘অতন্দ্র প্রহরী’। আওয়ামী লীগের বহু নেতা নির্বাচনী জনসভার বক্তৃতায় বলেছেন— স্বজন হারানো ব্যথায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া হাসিনার হারানোর কিছু নেই। গত নির্বাচনে ‘অতন্দ্র প্রহরী’ প্রচার তুঙ্গে তুলেছিল আওয়ামী লীগ। মোদীর ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ ঘোষণাতেও যেন তারই প্রতিধ্বনি। বিজেপিও মাঠে নেমেছে ‘চৌকিদার’ স্লোগান নিয়ে।
মিল যেন বিরোধী ‘ঐক্য’-তেও। ভারতে একক রাজনৈতিক দলের পক্ষে মোদীর মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছে না। হাসিনার বিরুদ্ধেও ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গড়তে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশে। অনেক ঢাকঢোল বাজিয়ে সেই ফ্রন্ট তৈরি হলেও অচিরেই বোঝা গিয়েছিল, মতাদর্শ ও স্বার্থের পারস্পরিক সংঘাতে এই জোট জেরবার। ভোট যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, প্রতিবেশী ভারতেও যেন বিরোধী জোটের সেই একই চিত্র। সূত্র: আনন্দবাজার