ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে ফেনীর সোনাগাজীতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে নিহত নুসরাত জাহান রাফির বিচারের আকুতির একটি ভিডিও নিয়ে। ভিডিওটি সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে তোলা। যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর ওসির কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত।
বৃহস্পতিবার সোনাগাজীর আলো নামে একটি ফেসবুক পেজে ওই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। এরপরই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নুসরাত। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শেষের দিকে নুসরাত বাঁচার আকুতি করে ওসির কাছে।
ভিডিওর পুরোটা সময় নুসরাতকে কান্না করতে দেখা যায়। ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন এবং তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। এ সময় ওসি বলেন, ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’। তিনি আরও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’
থানার ভেতরে নুসরাতকে জেরা করে ওসি বলেন, ‘কিসে পড়? ক্লাস ছিল?’ তাকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়- ‘কারে কারে জানাইছো বিষয়টা?’
নুসরাত যখন জানায়, তাকে অধ্যক্ষ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন প্রশ্ন করা হয়- ‘ডেকেছিল, নাকি তুমি ওখানে গেছিলা?’ পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল বলে নুসরাত জানালে প্রশ্ন করা হয়- ‘পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল? পিয়নের নাম কী?’ নুসরাত সে সময় পিয়নের নাম বলেন- ‘নূর আলম।’
পুরো ভিডিওজুড়েই নুসরাত কাঁদছিলেন। এক সময় ওসি তাকে ধমকের সুরে বলে- ‘কাঁদলে আমি বুঝবো কী করে, তোমাকে বলতে হবে। এমন কিছু হয়নি যে তোমাকে কাঁদতে হবে।’
ভিডিও’র শেষ দিকে নুসরাতের কথা বলা শেষ হলে ওসি বলেন- ‘এইটুকুই?’ এ সময় তাকে উদ্দেশ করে ওসি বলেন, ‘এটা কিছু না, কেউ কিছু লিখবে না তোমার কথা। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। কিছু হয়নি। রাখো। তুমি বসো।’
ভিডিওটি নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যৌন নির্যাতনে ও নুসরাতের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। আগুনে হত্যাচেষ্টার পর নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়।
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। ২৭ মার্চ পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন তিনি। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়।