ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি ও অধ্যক্ষ এএস এম সিরাজ উদদৌলার মুক্তি দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্বদাতা নূরুদ্দিনকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ভালুকার সিডস্টোর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ময়মনসিংহ ব্রাঞ্চ। নুসরাত হত্যার মামলার দ্বিতীয় আসামি তিনি।
নুরুদ্দিনের হাতে এর আগেও নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন নুসরাত। অধ্যক্ষের যেকোনো অপকর্মের দোসর এই নুর উদ্দিন এর আগে নুসরাতকে ২০১৭ সালে একবার চুন নিক্ষেপ করেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সোনাগাজীর খাতিজাতুল কোবরা মহিলা মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় নুসরাতকে চুনের পানি ছুঁড়ে নুরুদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন বখাটে। নুসরাত বাংলা ২য় পত্র বিষয়ের পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার কাশ্মির বাজার এলাকায় তার চোখে দাহ্য পদার্থ (চুনের পানি) ছুঁড়ে মারে। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ঐ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কোন বিচার হয়নি। আর এই বিচার না হওয়ার ফলেই আবারো সেই নুরুদ্দিন বাহিনীর হাতে প্রাণ দিতে হলো নুসরাতকে। এই ঘটনা তখন বিভিন্ন মিডিয়াও এসেছিল বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তাদের ভাষ্যে, নুসরাতকে আগুনে ঝলসে দেওয়ার ঘটনার আগের দিন ৫ এপ্রিল রাতে এবং ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল সকালেও নুরুদ্দিনকে মাদ্রাসার মূল ফটকে দেখা গেছে। তার সঙ্গে ছিলেন শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম নামে আরও একজন। এ দু’জনই মামলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় নম্বর আসামি।
নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলায় ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে ‘মুক্তি পরিষদ’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক হন নূরুদ্দিন এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক হন শাহাদাত। তাদের নেতৃত্বেই সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়।
অভিযোগ পাওয়া যায়, শ্লীলতাহানির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এরাই নুসরাত ও তার স্বজন-সঙ্গীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন নুরুদ্দিনের নেতৃত্বে আরো কয়েকজন।
উল্লেখ্য, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে এর আগেও ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন।
ঘটনার চারদিন পর ১০ এপ্রিল, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।