রাজনীতিতে পর্দার আড়ালে শর্ত-পাল্টা শর্তের খেলা চলছে। খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে সরকার বিএনপিকে ৫ শর্ত দিয়েছে। এবার সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপি সরকারকে ৫ শর্ত দিলো। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তারা সরকারের কাছে ৫ শর্ত দিয়েছে।
এই ৫ শর্ত পূরণ হলে তারা সংসদে যাবে এবং সংসদ সদস্য হিসেবে বিএনপির যে ছয়জন নির্বাচিত হয়েছিল তারা শপথ নিবেন এবং সংসদে যোগদান করবেন। যদি এ শর্ত না মানা হয় তাহলে তারা সংসদে যাবেন না।
উল্লেখ্য যে, যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা যদি ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ না করেন তাহলে তাদের আসনগুলো শূন্য ঘোষিত হবে। সেখানে উপ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপ নির্বাচন যদি হয় তাহলে সংসদ থেকে বিএনপি অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের যে শর্ত পূরন করে সংসদে উপস্থিত হতে চেয়েছিলে, সে শর্তটি লংঘিত হবে। আওয়ামী বা একদলীয় ঘরানার সংসদ হিসেবেই এটা প্রতিষ্ঠিত হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে ৫টি শর্ত দেওয়া হয়েছে সংসদে যাওয়ার জন্য। শর্তগুলো হল__
১. বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করা। তবে সেই মুক্তি প্যারোল নয়। জামিন দিতে হবে। দুটি মামলায় জামিন বাকি আছে এ দুটি মামলায় সরকার আপত্তি বা বিরোধীতা করবে না।
২. তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যে কূটনৈতিক উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে, সেই উদ্যোগ সরকার বন্ধ করে দিবে এবং তারেক জিয়া লন্ডনেই অবস্থান করবেন।
৩. বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যে সন্ত্রাস, অগ্নি সংযোগসহ বিএনপির ভাষায় যে গায়েবী মামলা, তা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. বিএনপির যে আটক নেতাকর্মী আছে সেই আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. বিএনপির জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরী করতে হবে। সভা সমাবেশসহ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল যে সমস্ত অধিকার ভোগ করে সে অধিকারগুলো দিতে হবে।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন যে, সরকার যদি বিএনপির এই ৫ টি শর্ত পূরণ করে সেক্ষেত্রে বিএনপি সংসদে যাওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারবে। তবে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, একমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বিএনপির নির্বাচিত পাঁচজনই সংসদে যেতে আগ্রহী। তারা দলের মহাসচিবের কাছে এব্যাপারে চাপও দিচ্ছে। অন্য একটি সূত্র বলছে যে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সংসদে যেতে আগ্রহী কিন্তু দলের চাপে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে তিনি রাজী হচ্ছেন না। তবে তিনি চাইছেন দল যেন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। দল সিদ্ধান্ত নিলে তিনি আপত্তি করবেন না।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল দলের চোখে ভিলেনে পরিণত হয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের সাথে আঁতাত করে নির্বাচন করেছেন এবং এই নির্বাচনী ফলাফলের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দায়ী। এই প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুল সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কোনো অবস্থান ব্যক্ত করছেন না।
তিনি মনে করছেন যে, যদি দলের মধ্যে থেকে একটি চাপ সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে তিনি সংসদে যেতে পারবেন। তবে তিনি বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলেছেন যে, সংসদে যাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করা যেতে পারে। এই দরকষাকষি করে বিএনপি অনেক কিছুই হাসিল করতে পারে। সেজন্যই কালক্ষেপণ করা হয়েছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ৫ দফার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রী বলেছেন যে, এই ধরণের শর্ত মেনে বিএনপিকে সংসদে নেয়ার চিন্তাভাবনা আওয়ামী লীগের নেই। সরকার মনে করছে যে, বিএনপি যদি সংসদে না আসে তাহলে বিএনপিকে তাঁর করুণ পরিণতি বরন করতে হবে। বিএনপি যদি সঠিক রাজনৈতিক ধারা বুঝতে পারে তাহলে অবশ্যই তারা সংসদে আসবে।