ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) এসএম সিরাজ উদ্দৌলার নির্দেশেই আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্ঠা করা হয় নুসরাত জাহান রাফিকে। এরপর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নুসরাত।
এদিকে রাফিকে মূলত দুই কারণে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দুই কারণের কথা জানিয়েছেন পিবিআইয়ের প্রধান ও পুলিশের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, দুই কারণে রাফিকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এর একটি হল- অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করে রাফি আলেম সমাজকে হেয় করেছে বলে মনে করেছে খুনিরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ শামীম দীর্ঘদিন ধরে রাফিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। রাফি তা বারবারই প্রত্যাখ্যান করছিল। এ ক্ষোভ থেকে শামীম তাকে হত্যা করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়।
নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে সংস্থাটি। বলা হয়েছে আগুনে পোড়ানোর কাজে অংশ নিয়েছিল চারজন। বোরকা ও হাতমোজা পরে তার শরীরে আগুন দেয় কমপক্ষে চারজন। এদের মধ্যে ছিল দু’জন ছাত্র এবং দু’জন ছাত্রী। তারা রাফিরই সহপাঠী।
তিনি বলেন, ‘নুসরাতকে আগুনে পোড়ানোর ২টি কারণ স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা। হত্যাকারীরা নুসরাতকে হত্যার আগে সবাই মিলে বসে হত্যার ছক তৈরি করে।’
হত্যার প্রথম কারণ হচ্ছে, নুসরাত অধ্যক্ষসহ পুরো আলেম সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করেছিল বলে হত্যাকারীরা একমত হয়েছিল। সে কারণে তাকে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে বলে তারা সিদ্ধান্ত নেয়।
দ্বিতীয় কারণ, নুসরাত হত্যার অন্যতম গ্রেপ্তারকৃত আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম। সে বেশ কয়েক মাস যাবৎ নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।কিন্তু শামীমের প্রেমের প্রস্তাবে নুসরাত রাজি হচ্ছিল না। মূলত এতে ক্ষিপ্ত হয়েই শামীম নুসরাতকে হত্যা করতে সবার সঙ্গে একমত হয়েছিল।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার কথা স্বীকার করে শাহাদাত হোসেন শামীম এসব কথা জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল তারিখে সকাল বেলা সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাত জাহান রাফিকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে বলা হয়। এ সময় নুসরাত মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে মুখোশ পরা লোকজন তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাত মারা যান।