একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে যে ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাদের একজন আমিনুল ইসলাম। তিনি চাঁপাইনবাবঞ্জ-২ (নাচোল-ভোলারহাট-গোমস্তাপুর) আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি শপথ নিতে পারছেন না।
তবে তিনি জানিয়েছেন শপথ না নিলে তিনি এলাকায় যেতে পারবেন না এবং তাকে এলাকার লোকজন মারবে।
জেলা বিএনপির এই সাধারণ সম্পাদক বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দল আমাকে মৌখিকভাবে শপথ নিতে নিষেধ করেছে তাই আমি নিইনি৷ এখনো সেই সিদ্ধান্তই আছে৷ নতুন করে কোনো আলোচনা নেই৷ নির্বাচনে কারচুপির কারণেই দলের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷’
আমিনুল বলেন, ‘আমি বড় নেতা না৷ রুট লেভেলে পলিটিক্স করি৷ মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে৷ তাই মানুষ শপথ না নিলে আমাকে মারবে৷ শপথ না নিলে তাঁরা আমাকে এলাকায় যেতে নিষেধ করেছে৷’
বিপদ থেকে উত্তরণে প্রতিবেদকের কাছে দোয়াও চান আমিনুল ইসলাম৷
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত দল শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে কী করব সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
বগুড়া-৪ (কাহলু-নন্দীগ্রাম) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি মাত্র৷ বড় কেনো নেতা না৷ এখন কেন্দ্রীয় নেতারা যদি শপথ নিতে বলেন শপথ নেব৷ না বললে নেবো না৷ তবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম৷ শুনছি প্যারোলে বা জামিনে মুক্তির কথা৷ কিন্তু কী হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় নেতারাই বলতে পারবেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এর আগে আমরা নির্বাচন করিনি৷ গত টার্মে এখানে আমাদের কেউ ছিল না৷ এতদিন পর এখানে নির্বাচিত হয়েছি৷ তাই যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের একটা চাপ আছে৷ সংসদে যান, আমাদের কথা বলেন, দেশের পক্ষে কথা বলেন, জাতির পক্ষে কথা বলেন৷ তাদেরকে আমরা বুঝিয়ে বলছি৷ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারি না৷ ঐক্যফ্রন্টের দুইজন (গণফোরাম) সংসদে গেলেও আমরা যেতে পারি না৷ তাদের আদর্শ এক নয়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে নির্বাচিত হারুন অর রশীদ বিএপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে শপথ নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি৷ আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি ঐক্যফ্রন্ট শপথ নেবে না৷ আর দলের মহাসচিব আমাদের একদিন ডেকে বলেছেন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া যাবে না৷ আমাদের চিঠি দিয়ে কিছু বলা হয়নি৷ তাই আমরা শপথ নিইনি।’
হারুন বলেন, ‘শপথ না নেয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের মূল কারণ খালেদা জিয়ার মুক্তি নয়৷ তার মুক্তি তো পাওয়া উচিত৷ নাজমুল হুদাতো ১২ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বাইরে আছেন৷ মূল কারণ হলো নির্বাচনে কারচুপি৷ আসলে তো ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়নি৷ আগের রাতেই নির্বাচন হয়ে গেছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা শপথ নেবো কি না সেটা নিয়ে কেন্দ্র থেকে আমাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি৷ আমরাও যোগাযোগ করিনি৷ ৩০ তারিখে সিদ্ধান্ত হলেও তো শপথ নেয়া যাবে৷ আর যদি দলের এই সিদ্ধান্তই বহাল থাকে তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি শপথ নেবো কি না সে ব্যাপারেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি৷’
৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মোট আটজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ তাদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির এবং দুজন গণফোরামের৷ ৩০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসলেও ৮ মার্চ শপথ নেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ৷ আর ২ এপ্রিল শপথ নেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেকজন সংসদ সদস্য সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির হোসেন৷ কিন্তু বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জন এখনো শপথ নেননি৷
নির্বাচনের পরপরই বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অনিয়ম এবং ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট এবং নতুন নির্বাচনের দাবি জানায়৷ দলের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নেবেন না বলেও জানানো হয়৷ পরে গণফোরামের দুই এমপি শপথ নিলেও বিএনপি শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড়৷ সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশনের পরবর্তী ৯০ দিন পর্যন্ত নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নিতে হয়৷ নয়তো আসন শূন্য হয়৷ তবে কোনো সংসদ সদস্য যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে এই সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন৷ কোনো আসন শূন্য হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার বিধান রয়েছে৷
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্য হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া, বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুন অর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান জাহিদ৷