সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশি সংস্থায় চাকরির জন্য লিয়েন ছুটির শর্ত কঠোর করা হচ্ছে। একনাগাড়ে বা বিচ্ছিন্নভাবে তারা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর লিয়েনে ছুটি নিতে পারবেন। এর বেশি লিয়েনে থাকলে পাঁচ বছর পূর্তির দিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হবেন। লিয়েন ছুটি শেষে কোনো কর্মকর্তা এক বছর সরকারি চাকরি না করে দ্বিতীয়বার এ ছুটিতে যেতে পারবেন না।
এসব বিধান যুক্ত করে বিদ্যমান 'বৈদেশিক চাকরিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ সম্পর্কিত নীতি ও পদ্ধতি' সংশোধনী চূড়ান্ত করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শিগগিরই নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। এ সুযোগে সরকারি কর্মকর্তাদের লিয়েন ছুটি নেওয়ার প্রবণতাও বেড়ে গেছে। এতে সরকারি কাজকর্ম নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিদ্যমান নীতিমালার অস্পষ্টতা দূর করে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে।
বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ যে কোনো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় চাকরির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক দফায় পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন নিতে পারেন। লিয়েনের মেয়াদ শেষে দেশে এসে কিছুকাল সরকারি চাকরি করার পর আবারও লিয়েনে যেতে পারেন। তাছাড়া সরকার বিশেষ বিবেচনায় লিয়েনের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়াতে পারে। এ নীতিমালার সুযোগে অনেক কর্মকর্তা বারবার লিয়েনে ছুটি নিচ্ছেন। আবার অনেকে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিদেশি সংস্থায় যোগ দিয়ে পরে ছুটির আবেদন করছেন। অনেকে লিয়েন শেষ হওয়ার পরও সরকারি চাকরিতে ফিরে আসতে দেরি করেন। এসব কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, লিয়েন সংরক্ষণ বা লিয়েনে ছুটি নিয়ে কোনো কর্মকর্তা বিদেশি সংস্থায় চাকরি করে পরে আবার আগের সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি বিদ্যমান নীতিমালার শিরোনাম সংশোধন করে 'বৈদেশিক চাকরিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ এবং গণকর্মচারীদের বৈদেশিক নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ব পদে লিয়েন সংরক্ষণ সম্পর্কিত নীতি ও পদ্ধতি' প্রস্তাব করেছে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, গণকর্মচারীরা সমগ্র চাকরি জীবনে বিচ্ছিন্নভাবে অথবা একনাগাড়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন সংরক্ষণ করতে পারবেন। এই পাঁচ বছর শুধু চাকরির জ্যেষ্ঠতা, বেতন বৃদ্ধি ও অবসর গ্রহণের জন্য বিবেচনা করা হবে। এ সময় তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। অবশ্য পদোন্নতির বিষয়টি আগের নীতিমালায়ও ছিল।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী একবার লিয়েন থেকে আসার পর দ্বিতীয়বার লিয়েনে যেতে হলে কমপক্ষে এক বছর সরকারি চাকরি করতে হবে। তবে কোনোভাবেই মোট লিয়েন পাঁচ বছরের বেশি হতে পারবে না। লিয়েনের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার আগে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে অনুপস্থিত থাকতে বা বৈদেশিক চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না। ভূতাপেক্ষভাবে (পেছনের তারিখ দিয়ে) লিয়েন মঞ্জুর বা বাড়ানোর আবেদন করা যাবে না।