প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আবারো রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। জানিয়েছেন, অবসর নিতেই হবে। আর অবসরের পর তিনি পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চলে যাবেন এবং সেখানেই থাকবেন।
শুক্রবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সম্প্রতি ব্রুনাইয়ে তিন দিনের সরকারি সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অবসরে যাওয়ার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবসর তো একদিন নিতেই হবে।’ আর তারপর দলের প্রধান কে হবেন সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী জানান, এটা ঠিক করবে দল। দল যাকে দায়িত্ব দেবে তিনি দলের প্রধান হবেন। এখানে তার কিছু করার নেই। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই দল চলবে।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি দল ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে বলেন, আমাদের কাউন্সিলের সময় ঘনিয়ে আসছে। কাউন্সিল মানেই দল নতুন করে সাজানো। ইতিমধ্যে আমরা আটটি টিম করে দিয়েছি।
নিজের রাজনীতিতে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনোদিন ভাবিনি দলের প্রেসিডেন্ট হবো। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর লন্ডনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথম স্ট্যাটমেন্ট দেয় রেহানা।’
স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, তার বয়স এখন ৭২ বছর। এর মধ্যে ৬০ বছর তিনি গভীরভাবে রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এজন্য রাজনীতিতে তিনি সবার চেয়ে প্রবীণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নেতৃত্বে যাবো কোনোদিন চিন্তাই করিনি। কাজ করার করে গেছি। আমাকে যখন দলের সভাপতি করা হলো তখন সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে আসব। দেশে এসে দায়িত্ব নিয়েছি, কাজ করেছি। ক্ষমতায় আসার পর দেশকে একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।’
এ সময় তিনি মিডিয়ার ব্যাপারে তার আক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কাজ করতে গিয়ে কোনোদিন মিডিয়ার আনুকূল্য পাইনি। সব সময় বৈরিতা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সিরিজ বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করছি। এ হামলায় আমার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের মেয়ের ছেলে আমার নাতি ৮ বছরের নিষ্পাপ শিশু জায়ান চৌধুরী নিহত হয়েছে। জায়ানের বাবা মশিউর হক চৌধুরী এখন পর্যন্ত গুরুতর আহত অবস্থায় শ্রীলঙ্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
তিনি বলেন, আমি ব্রুনাইয়ের রাজধানীতে পৌঁছানোর পর এই মর্মান্তিক হামলার খবর শুনতে পাই। আমাদের প্লেনটা যখন আকাশে উড়ছিল তখন খবর আসলো এ ধরনের হামলা হয়েছে। পরবর্তীতে ওখানে নেমে বিস্তারিত খবরটা পাই। জায়ানের মৃত্যুর খবর পাই। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে একটি শোক বার্তা পাঠাই। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে কার্যকর এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি। গোয়েন্দারা চমৎকার কাজ করছে। গতকালও আমি আমাদের গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে। সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা একাজে জড়াচ্ছে। আমার প্রশ্ন- তারা এই আত্মঘাতী হামলা করে কী পাচ্ছে।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডে কী হলো? একজন মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে গুলি করার মুহূর্ত সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কী বীভৎস! কী বীভৎস মানসিকতা! সে একজন খ্রিস্টান। আর এখানে (শ্রীলঙ্কায়) যারা শনাক্ত হয়েছে, তারা মুসলমান।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ২১ এপ্রিল তিন দিনের সরকারি সফরে ব্রুনেইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে পৌঁছান। সফরে তিনি ব্রুনেইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাসহ সুলতান ও রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশ-ব্রুনেই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বেশ কিছু কর্মসূচিতে যোগ দেন।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবন নুরুল ইমানে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং এলএনজি সরবরাহ-সংক্রান্ত সাতটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সাতটি চুক্তির মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি বিনিময় নোট।
এগুলো হচ্ছে কৃষি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, মৎস্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, পশুসম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, সাংস্কৃতিক ও শিল্প সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতার সমঝোতা স্মারক, এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক এবং কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য ভিসার ছাড়সংক্রান্ত বিনিময় নোট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার সকালে ব্রুনেইয়ের রাজধানীতে কূটনৈতিক এলাকা জালান কেবানজাসানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি রয়েল রিগালিয়া মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় রোহিঙ্গা সংকটের ন্যায়সংগত ও স্থায়ী সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।