সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিতে এসে সংবাদ সম্মেলনে বলে গেলেন ভাগ্যে তাঁর বিশ্বাস নেই। ফুটবল হলো গোলের খেলা। গোল না করতে পারলে হবে না। তাঁর দল অনেক সুযোগ পেয়েছে গোল করার। কিন্তু সময়মতো গোল করে দল খেলায় তো ফিরতে পারেনি।
পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন ব্রাজিল কোচ। ব্রাজিল গোলে শট নিয়েছে ২৬টি, ৯টিই ছিল লক্ষ্যমুখী। পক্ষান্তরে বেলজিয়াম মোট ৮টি শট নিয়ে ৩টি গোলমুখে রাখতে পেরেছে এবং তার দুটি থেকে গোল হয়েছে। এটাই ফুটবল। আক্রমণের সমাপ্তি টেনেছে বেলজিয়াম।
বেলজিয়াম দলটি দুর্দান্ত, এ কথা তিনি আগেও বলেছেন। ম্যাচ শেষে আরও একবার প্রশংসায় ভাসিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। স্বীকার করে নিতে দ্বিধা করেননি ব্রাজিলের ‘প্রফেসর’। তবে তাঁর ছেলেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে বলে বলার আর কিছু নেই। দিন শেষে একটি দল জেতে, একটি দল হারে—এটাই ফুটবল। এবং এটি ব্রাজিল কোচ মেনে নিয়েছেন।
যে তিতের মুখে শুধু সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচটি বাদে প্রতিটি ম্যাচের পরই ছিল হাসি, সেই হাসি মুছে গেছে। আর হাসিতে উজ্জ্বল হয়েছেন বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। বেলজিয়ামের স্প্যানিশ কোচের কাছে এটাই ছিল তাঁর কাছে সেরা ম্যাচ। ব্রাজিলের মতো দলকে হারিয়ে বেলজিয়াম সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে, এতেই তিনি খুশি। এরপর যদি থেমে যায় বেলজিয়ামের রথের চাকা, তাতেও তাঁর কোনো দুঃখ থাকবে না।
কেভিন ডি ব্রুইনা আগের ম্যাচগুলোতে আলো ছড়াতে পারেননি, আসল সময়েই উঠেছেন জ্বলে। একটি গোল করেছেন, আক্রমণে ছিলেন যেন বর্শার ফলা। কোচের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে ম্যান অব দ্য ম্যাচ বলে গেলেন সেমিফাইনালের প্রস্তুতির কথা। সেন্ট পিটার্সবার্গের সেমিফাইনালে দেখা হবে ফ্রান্সের সঙ্গে। আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির প্লেমেকার ফ্রান্সকে পাঠিয়েছেন সতর্কবার্তা, ‘এখন আমাদের দলের যে অবস্থা তাতে তো মনে হয় ফ্রান্সের সঙ্গেও আমরা জিততে পারব।’
বাসে উঠে যাওয়ার পথে কেভিন ডি ব্রুইনা এই কথাগুলোই বলে গেলেন নতুন করে। তাঁর পাশাপাশি কথা বলেছেন এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু, মারুয়ানে ফেলাইনি। সবার মুখেই হাসি। এমন জয়ের পর মুখে হাসি না থাকাটাই ব্যতিক্রম। বেলজিয়ান খেলোয়াড়েরা যেন পৌঁছে গেছেন ‘সব পেয়েছির দেশে।’
ব্রাজিল দলটা এমন, তারা জিতলেও দেরি করে মিক্সড জোনে আসে, হারলেও। মেক্সিকোকে হারানোর পরে মিক্সডে এসেছিল ২ ঘণ্টা পর। বেলজিয়ামের কাছে হারের পর আড়াই ঘণ্টা পর।
প্রথমে ব্রাজিলের মিডিয়া অফিসার এসে জানিয়ে গেলেন, কেউ কথা বলবে না। কিন্তু কথা না বলে কি থাকতে পারেন কেউ? সাংবাদিকদের জোরাজুরিতে কথা বলেছেন পাওলিনহো, মিরান্ডা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস। সবার চোখ লাল। পাওলিনহোর চোখ দিয়ে মনে হলো আরেকটু হলেই গড়িয়ে পড়ত শ্রাবণধারা।
মিরান্ডা ধীর, শান্ত স্বরে বলে গেলেন, এখনই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নিচ্ছেন না। বোঝা গেল মনের কোণে আগামী বছর দেশের মাটিতে কোপা আমেরিকা খেলার স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রেখেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা সেন্টার ব্যাক।
নেইমার কোনো কথাই বলেননি। ‘নেইমার’ ‘নেইমার’ বলে চিৎকার করলেন ব্রাজিলের অনেক সাংবাদিক, নেইমার হাত দিয়ে চোখ ঢেকে চলে গেলেন।
কথা বলেছেন অবশ্য গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ব্রাজিলের ‘নাম্বার নাইন’ অথচ গোল পাননি একটিও। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিরাট দুঃখ বয়ে ফিরছেন তিনি। জেসুস বলেছেন, কাউকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই, ‘আমরা যেমন দলগতভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলাম, দলগতভাবেই সেখান থেকে বিদায় নিলাম। সাফল্য ও ব্যর্থতা যা কিছু সবই আমাদের দলগত।’নেইমাররা যখন বাসে উঠছেন, কাজান অ্যারেনা ভাঙা হাট। দূরের বাড়িগুলো থেকে হলুদ আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। রাতজাগা পাখি ডান ঝাপটে চলে যাচ্ছে কাছের জলাভূমিতে। নির্জনতাকেই একান্ত সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে ব্রাজিল।