মন্দিরে গিয়ে নিজ হাতের আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে স্কুল ছাত্রী সেতু মন্ডলের (১৫) কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেয় হযরত আলী ওরফে সজল (২৭)। এরপর সেতুকে বিয়ে করার আশ্বাস দেয়াসহ আরো অনেক রকম প্রতিশ্রুতিও দেয়। সে রাতেই লঞ্চ করে সেতুকে নিয়ে রওনা হন বরিশালে নিজ বাড়ির উদ্দেশে। লঞ্চের কেবিনে সজল সেই রাতে সেতুকে কয়েকদফা ধর্ষণ করে এবং বরিশাল পৌছানোর পর আবার পুনরায় ভোর রাতে সেখান থেকে ঢাকা চলে আসে। পরের দিন ১১ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গোলামবাজার পুলিশ ক্যাম্পের কাছাকাছি সেতুকে ফেলে পালিয়ে যায় সজল।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) মুন্সীগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য দেন গ্রেফতার সজল।
এর আগে মেধাবী ছাত্রী সেতু মন্ডলকে (১৫) অপহরণ, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী মূল আসামী হযরত আলী ওরফে সজলকে (২৭) গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। শনিবার ভোরে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া থেকে এসআই হাসান আক্তার তাকে গ্রেফতার করেন। পরে শনিবার রাতেই তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত সজল বরিশালের মেহেদীগঞ্জ উপজেরার উনানিয়া গ্রামের আঃ মজিদ সরদারের ছেলে। গ্রেফতারের পর হযরত আলী ওরফে সজল বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় নিহত সেতু মন্ডলকে অপহরণ, ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচণা দেয়ার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
সিরাজদিখান থানার ওসি মোঃ ফরিদ উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন ১০ এপ্রিল সেতু মন্ডল স্কুলে যাওয়ার আগে হযরত আলীর সাথে কয়েক বার ফোনে কথা হয়। পরে গোয়ালখালী এলাকা থেকে সেতুকে তুলে নিয়ে শাখারী বাজার এলাকায় নিয়ে যায় অভিযুক্ত সজল। পরে একটি মন্দিরে গিয়ে সজল নিজের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল কেটে রক্ত দিয়ে সেতুর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেয় এবং তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেয়াসহ আরো অনেক রকম প্রতিশ্রুতিও দেয়।
পরে লঞ্চের কেবিন করে সেতুকে নিয়ে সজল তার গ্রামের বাড়ির দিকে যায়। লঞ্চের ভিতরে থাকা অবস্থায় সজল সেই রাতে সেতুকে কয়েকদফা ধর্ষণ করে এবং বরিশাল পৌছানোর পর আবার পুনরায় ভোর রাতে সেখান থেকে ঢাকা চলে আসে। পরের দিন ১১ এপ্রিল ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গোলামবাজার পুলিশ ক্যাম্পের কাছাকাছি সেতুকে ফেলে পালিয়ে যায় সজল।
পরে গোলামবাজার পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ সেতুকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে খবর দিলে সেখান থেকে সেতুকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা। এই ঘটনার পাঁচদিন পর গত ১৭ এপ্রিল নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সেতু। এসময় পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মিডফোর্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যায় সেতু মন্ডল।
তিনি আরো বলেন, মামলা দায়ের করার সময় নিহত সেতুর মা প্রধান আসামী হিসেবে সোহেল নামে একজনের নাম বলেছিল। কারণ তাকেই সজল বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়ে হযরত আলী ওরফে সজল আদালতে তার দোষ স্বীকার করে। হযরত আলী নিজের নাম পাল্টিয়ে সজল ছদ্মনামে সেতুর সাথে পরিচিত হয়েছিল। এবং আত্মহত্যা করার আগে নিজের মায়ের কাছে সেতু এই নামটিই বলছিল।