বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ শুক্রবার ভারতের বাহরামপুর-ভুবেনশ্বর উপকূলে আঘাত হানার পর শনিবার বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে। মূলত ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গায় থাকবে ফণি’র কেন্দ্র। তবে সারাদেশেই তার প্রভাব পড়বে।
ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ‘উইন্ডি ডটকম’ থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্র এমনই আভাস দিচ্ছে। উইন্ডি বলছে, শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। এ সময় ফণি’র ধ্বংসলীলা চলতে পারে পুরো দেশ জুড়েই।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ বাংলাদেশের দক্ষিণ/পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় দ্রুত ধেয়ে আসছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুলীয় এলাকা মোংলা ও পায়রায়কে ৭ এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার বিকাল নাগাদ আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঘুর্ণিঝড়টি মোংলাবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বার্তায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর স্থানীয় বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। একইসঙ্গে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বার্তায় বলা হয় ঘুর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তীতে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে ওইদিন ৩ মে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।
তবে আবহাওয়া বার্তায় আরো বলা হয়, খুলনাঞ্চলসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৩ মে সকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়ার বার্তায় আরো বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টা ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।