এবারের নির্বাচনে অল্পসংখ্যক আসনে জেতার পর ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলে প্রথমে সংসদে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তাদের সেই বক্তব্য ভুল ছিল বলে স্বীকার করলেন খোদ দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে যে বলেছিলাম সংসদে যাবো না সেই সিদ্ধান্তটি আমাদের ওই মুহূর্তে সঠিক ছিল না। এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।’ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল। বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণসভায় আয়োজন করে সম্মিলিত ছাত্র ফোরাম। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোট মোট আটটি আসনে বিজয়ী হয়। ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিজয়ীরা শপথ নেবেন না বলে জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রথমে জোটের শরিক দুজন এবং পরে বিএনপির একজন শপথ নিলে অনেকটা চাপে পড়ে দলটি। পরে বাধ্য হয়ে আরও চারজনকে শপথের অনুমতি দেয় বিএনপি। যদিও শেষ পর্যন্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেনি। তার আসন ইতিমধ্যে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় ফোরামে সংসদে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এমপিরা শপথ নেন। তাদের রহমানের এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলে দাবি করেন ফখরুল। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সস্তা স্লোগান না দিয়ে আমাদের লড়াইটা করতে হবে সব জায়গা থেকে। সংগ্রাম করতে হবে। পথ বের করে নিতে হবে। ভেতরেও কথা বলতে হবে, বাইরেও বলতে হবে। শুধু নেগেটিভ চিন্তা করলে এগোনো যাবে না। পজিটিভ চিন্তাও করতে হবে।’ ফখরুলের দাবি, ‘এই সরকার শুধু গণতন্ত্রেরই ক্ষতি করেনি, সবদিক থেকে দেশেরও ক্ষতি করেছে। আজ অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। যতই বলুক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, অর্থনীতির ভীষণ উন্নয়ন হয়েছে, অর্থনীতি একেবারে গম গম করছে। কিন্তু অর্থনীতি অত্যন্ত ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। কয়েকদিন আগে সিপিডিও একথা বলেছে।’ বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে দেওয়া হয়েছে। জামিন পাওয়ার যোগ্য হলেও ভয়ে তাকে জামিন দিচ্ছে না। কারণ সরকার জানে দেশনেত্রী বেরিয়ে এলে হ্যামিলনের বাঁশির মতো মানুষ বেরিয়ে আসবে। তিনি এতই অসুস্থ, তার জরুরি চিকিৎসা দরকার। আমি বলতে চাই কারাগারে খালেদা জিয়ার যদি কিছু ঘটে তাহলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে বহন করতে হবে।’ দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুকে নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু দলের লড়াকু সৈনিক ছিলেন। সেজন্য তাকে টার্গেট করে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। পিন্টু ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব প্রিয় ছিল। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরে জেলখানায় তার নামে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করাই তার জন্য কাল হলো।’ আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ইয়াসীন আলী, বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম রবিন, শামীম পারভেজ, শাহিন শওকত, হাজী শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।