জমি বিক্রি করে পছন্দের দলের কিলোমিটারজুড়ে পতাকা তৈরি ও ব্রাজিলবাড়ি এরই মধ্যে ভক্তের পাগলামি প্রকাশ পেয়েছে, যা আকর্ষণ করেছে সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতসহ সারা দেশের মানুষের কাছে। বিশ্বকাপ নিয়ে মাপহীনভাবে চলছে তর্ক-বিতর্ক, মারামারি, জুয়া, পতাকা ওড়ানো, জার্সি ও পতাকা কেনা। সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেশের কোনো নাগরিক পছন্দের দল হেরে যাওয়ার জন্য আত্মহত্যা করে। এটা অস্বাভাবিক ও অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। ফেসবুকে ঢুকলেই বোঝা যায়, ভক্তদের পাগলামি, কে কিভাবে অন্য দলকে ছোট করতে পারে; রীতিমতো একটা প্রতিযোগিতার মতো হয়ে গেছে। সারা বাংলাদেশ ছেয়েছে ভিনদেশিদের পতাকায়, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও এত পতাকা ওড়ে না। তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে দেশে ছেয়ে যাওয়া পতাকার মিছিল। সুধীসমাজের মানুষ অতি বাড়াবাড়ি দেখছেন, কিন্তু তাঁরাও ভক্ত ফুটবলের, তাঁদের মধ্যে প্রিয় দলের প্রতি অনুরাগ আছে এবং প্রতিপক্ষ দলের প্রতি আছে শ্রদ্ধা, নেই ক্রোধের কোনো স্থান। আমরা যখন রাত জেগে রাস্তার মোড়ে প্রজেক্টর কিংবা টিভিতে হৈ-হুলোড় করে খেলা দেখি, বিশ্বের বাঘা বাঘা খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচিত হই, তখন আমাদেরও ইচ্ছা হয় বাংলাদেশ খেলুক। গ্রামে দেখেছি অনেক প্রতিভাধর ছেলে ও মেয়েকে, যারা ভালো ফুটবল খেলে। তাদের শক্তি প্রকাশের কোনো স্থান বা কোচ নেই। অকালে স্বপ্ন ভেঙে যায়। হঠাৎ উন্মাদনায় না ভেসে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে গড়ে উঠুক ফুটবল চর্চার কেন্দ্র। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে হাজার পেলে, মেসি, নেইমার, রোনালদো, যাদের বিকাশ নেই। দেশের প্রতিভার উঠতি সময় বা বয়সেই পতন। ব্যস, এখানেই হয় আমাদের ভাবনার ভরাডুবি। দেশের মাথারা যদি একটু ভেবে উদ্যোগ নেন, তাহলে আমরা ব্রাজিল ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা বলে গলা না ফাটিয়ে বাংলাদেশ বলে অহংকারে চিৎকার করতে পারব। বিদেশি খেলার ভিড়ে যেন দেশীয় খেলা হারিয়ে না যায় তার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকেই নিতে হবে এমন বিপ্লবী ও সাহসী উদ্যোগ। ভাবনার যতই ভরাডুবি হোক; দারুণ জমে উঠেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল! আমি চাই এবার নতুন কোনো একটি দল বিশ্বকাপ জিতুক, শুভ কামনা রইলো।
মেনহাজুল ইসলাম তারেক
মুন্সীপাড়া, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।