মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় শূন্য ঘোষিত বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা- সে ব্যাপারে এখনো আনুষ্ঠানিক কিছু জানা যায়নি।
অংশ নিলে প্রার্থী কে হবেন- তা নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। তবে বগুড়া বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি করছেন। তা না হলে যেন জিয়া পরিবারেরই কেউ এই নির্বাচনে অংশ নেন এমন প্রত্যাশাও তাদের।
দলের তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সাথে কথা বলে এমন বক্তব্যই পাওয়া গেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও মির্জা ফখরুল শেষ পর্যন্ত শপথ নেননি। এ কারণে গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ৮ মে নির্বাচন কমিশন থেকে এই আসনের উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর পর একই দিন বগুড়া জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম শাহ্ এই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৪ জুন সোমবার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ার ৭টি আসনই দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলেই ছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে বগুড়া-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করায় মহাজোটের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওমর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমরকে পরাজিত করে মির্জা ফখরুল এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তবে বগুড়া যেহেতু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি, এ কারণে জেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীরই প্রত্যাশা ওই পরিবারের কেউ যেন নির্বাচনে অংশ নেন।
অনেক নেতাই দাবি করেছেন খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার।
বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী আবদুুল হান্নান, নুনগোলা ইউনিয়ন বিএনপিকর্মী শহিদুল ইসলাম, এরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপিকর্মী দেলোয়ার হোসেনসহ তৃণমূল পর্যায়ে অনেক কর্মীর দাবি আসন্ন উপনির্বাচনে জিয়া পরিবারের যে কোনো সদস্যকে বগুড়ার প্রার্থী করা হোক।
োতাদের দাবির সাথে সহমত পোষণ করে বগুড়া জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, বিএনপি মহাসচিব যে আসন থেকে নির্বাচন করেছেন, সেখানে উপনির্বাচনে তার নিচের পদের কেউ নির্বাচন করবেন বলে মনে হয় না। যেহেতু বগুড়া বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা, তাই জনগণের প্রত্যাশা বেগম খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। আইনি জটিলতায় সেটি যদি না হয়, তা হলে অবশ্যই বগুড়াবাসী চায় জিয়া পরিবারের কেউ এই নির্বাচনে অংশ নেবেন। আমরা বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এই উপনির্বাচনে কেন্দ্রীয় যে কোনো সিদ্ধান্তই মেনে নিতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থাকায় বিগত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এবার যেহেতু উপনির্বাচন আসন্ন, তাই বগুড়ার ছাত্র-জনতার দাবি তাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সুযোগ করে দিতে হবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে এই নির্বাচনকে ঘিরে যে সিদ্ধান্তই আসবে দলের নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে। তবে বগুড়ায় এবার নির্বাচনে অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি কর্মীদের একমাত্র প্রার্থী বলেই আমরা মনে করি।
জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল বাশার বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কৌশলে একাদশ নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। এবার দলের মহাসচিব শপথ না নেওয়ায় বেগম জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকার চাইলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে তিনিই বগুড়ায় বিএনপি প্রার্থী হবেন বলে দলের নেতাকর্মীরা আশা করছে।