কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের বিরোধ মীমাংসার জন্য আওয়ামী লীগ ত্রিমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আজ ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট তিনজন নেতাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই তিন কর্মপন্থার প্রথমটি হলো- পদবঞ্চিতদের মধ্যে যারা পদলাভের যোগ্য, ত্যাগী, পরীক্ষিত, মেধাবী এবং দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল, ছাত্রলীগের জন্য কাজ করেছে তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা।
দ্বিতীয়ত, ৩০১ সদস্যের কমিটিতে যারা বিতর্কিত, বিশেষ করে যারা সুস্পষ্ট গঠনতন্ত্র লংঘন করে ছাত্রলীগের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেমনঃ বিবাহিত থাকা, চাকরিতে প্রবেশের পর বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়া, এ ধরনের অযোগ্যতার পরেও যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদেরকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া।
তৃতীয়ত, ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিতর্ককে রাজপথে নিয়ে এসে আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য ছাত্রলীগের যে সিন্ডিকেট ইন্ধন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পেছনে কাজ করছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন প্রাক্তন অন্তত তিনজন ছাত্রনেতা। যখনই ছাত্রলীগের কোনো কমিটি হোক না কেন, সেই কমিটিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে। সেই প্রতিনিধিদের দিয়ে এই সিন্ডিকেটের গডফাদাররা ছাত্রলীগের কমিটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানারকম ফায়দা হাসিল করে থাকেন। কিন্তু এবার ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে সিন্ডিকেটের পতন ঘটেছে। সিন্ডিকেটের গডফাদারদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে এমন শিক্ষার্থী দেওয়া হয়েছে, যারা ছাত্রলীগের কোনো প্রাক্তন নেতার সিন্ডিকেটের সদস্য নন। এজন্যই কমিটি গঠনের পর ছাত্রলীগ যে আন্দোলন করেছে তা প্রাক্তন কয়েকজন ছাত্রনেতার ইঙ্গিতেই হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে।
আজ বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন নেতাকে ডাকেন। এরা হলেন জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং বাহাউদ্দিন নাসিম। ছাত্রলীগের কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় যে সিন্ডিকেট, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে হামলার ব্যাপারে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সে কমিটির কার্যক্রমও পর্যালোচনা করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি মনে করছেন যে, ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছে, সে বিতর্ক তারা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলতে পারতো। সেখানে হামলা-পাল্টা হামলা এবং প্রকাশ্যে মিছিল ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। এজন্য কারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিন নেতার একজন বলেন যে, প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতারা তাদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি জন্য তাদেরকে দিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তার কাছেও এরকম তথ্য রয়েছে। যারা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করার মতো কঠোর অবস্থানেও আওয়ামী লীগ যেতে পারে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারন করেছেন। তবে আপাতত তিনটি বিষয় নিয়ে সমাধান করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি একটা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেখতে চেয়েছেন। শিগগিরই হয়তো এই তিন নেতা এই ব্যাপারে কাজ করবেন এবং একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরী করবেন।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার