যৌতুকের দাবিতে শিক্ষক স্বামীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শারমিন আক্তার (২৬) নামে এক শিক্ষিকা। তার শরীরের পিঠ থেকে কোমর পর্যন্ত পিটিয়েছেন স্বামী ও তার শ্বশুর। তাকে তালাবদ্ধ করে রাখারও অভিযোগ উঠেছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার। শনিবার বিকেলে শারমিন আক্তারকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করেন পৌর কাউন্সিলর মো. আব্দুল্লাহ। পরে বিকেলে তাকে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হুসনে মোবারক জানিয়েছেন, মারধরের ঘটনায় শারমিনের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে।
নির্যাতিতার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার হযরত শাহজামাল (রহ.) বিদ্যা নিকেতনের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন শারমিন। তিনি বকশীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরকাউরিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার মৃত নূর ইসলামের মেয়ে।
গত ছয় বছর আগে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাঝপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে আব্দুল মমিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। তাদের তাসফিয়া নামে এক কন্যাশিশু রয়েছে। শারমিনের স্বামী আব্দুল মমিন স্থানীয় অ্যাডভ্যান্স কিন্ডার গার্টেনের সহকারী শিক্ষক।
বিয়ের পর থেকেই আব্দুল মমিন যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন সময় শারমিনকে নির্যাতন করতেন। স্থানীয় চরকাউরিয়া বাজার সংলগ্ন শারমিনের বাবার রেখে যাওয়া জমি জোর করে লিখে নেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন তিনি। তবে শারমিন রাজি না হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে তাকে নির্যাতন করছিলেন আব্দুল মমিন।
গত শুক্রবার রাতে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুজনের তর্ক হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লোহার রড দিয়ে শারমিনকে মারধর করেন আব্দুল মমিন। এ সময় শারমিনের শ্বশুর হোসেন আলীও তাকে রড দিয়ে মারধর করেন।
মারধরের কারণে শারমিনের পিঠ, বাম হাত থেকে শুরু করে নিচের দিকে কোমর ও পায়ে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে তার স্বামী ও শ্বশুর মিলে শিশু সন্তান তাসফিয়াকেও মারধরের হুমকি দেন। এরপর একটি ঘরে সন্তানসহ তালাবদ্ধ করে রাখা হয় শারমিনকে।
শনিবার ঘটনার ব্যাপারে জানতে পারেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মো. আব্দুল্লাহ। পরে বিকেলে আব্দুল মমিনের বাড়ি গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে গুরুতর আহত ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় শারমিন ও তার শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানেই ভর্তি আছেন মা-মেয়ে।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মো. হারুন অর রশীদও শারিমনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সন্ধ্যায় শারমিনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি একটি লিখিত অভিযোগ বকশীগঞ্জ থানায় জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
চিকিৎসাধীন থাকার কারণে শারমিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ জানান, শারমিনের জরুরি উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাকে নির্যাতনের ব্যাপারে রাতেই বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হুসনে মোবারক জানান, শারমিনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। দরকার হলে আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. তাহেরুল ইসলাম জানান, স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ শারমিনের একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগ যাচাই বাছাই করে মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।