ভারতের সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল জানতে এবার অনেক দেরী হতে পারে বলে মনে করছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। কর্মকর্তারা মনে করছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হলেও অনেক রাতে হয়তো জানা যাবে ফলাফল। তবে প্রতি রাউন্ডের গণনা শেষে অন্যান্য বারের মতোই ফলাফল জানানো হবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ উপ-নির্বাচন কমিশনার উমেশ মিশ্র বলেছেন, ইভিএমের ভোট গণনার পরে ভিভিপ্যাট যন্ত্রের কাগজের স্লিপ গণনা শুরু হবে। পরে দুটি যন্ত্রের ভোটের সংখ্যা মিলিয়ে দেখা হবে। কেন্দ্র পিছু পাঁচটি করে বুথের ইভিএম আর ভিভিপ্যাটের ফল মেলানো হবে। এই পাঁচটি বুথ বাছাই করা হবে লটারির মাধ্যমে।
ভারতে ভোট নেয়ার জন্য বৈদ্যুতিক ভোট যন্ত্র (ইভিএম) ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে গণনার দিন দুপুরের মধ্যে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায় ফলাফল। কিন্তু এবারের ভোটে সব কেন্দ্রেই ইভিএমের সঙ্গে যুক্ত যে ভিভিপ্যাট যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, তা একটি একটি করে গুণতে হবে। ইভিএমের ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাট যন্ত্রের ফলাফল না মিললে আবারও গুণতে হবে ভোট। তারপরই ফলাফল প্রকাশ করা যাবে।
একেকটি ভিভিপ্যাট যন্ত্রের ভোট গুণতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে। যদি একবারেই মিলে যায় ফল, তাহলেও একেকটি কেন্দ্রে ফল ঘোষণা হতে অন্তত পাঁচ ঘণ্টা বেশি সময় লাগবে। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী কয়েক দশক ধরে নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করেন।
তিনি বলেন, প্রতিটা ভিভিপ্যাট যন্ত্রের স্লিপ একটা একটা করে গুণতে হবে। যদি ইভিএমের সংখ্যার সঙ্গে সেটা না মেলে তাহলে আবারও গুণতে হবে। তাই ব্যালটের যুগে যেমন গণনা শেষ হতে প্রায় ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতো, আমার ধারণা এবার প্রক্রিয়াটা শেষ হতে অন্তত তিরিশ ঘণ্টা সময় লাগবে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি একটি ইভিএমে কোনো প্রার্থী ৭২৩টি ভোট পায় আর ভিভিপ্যাটের স্লিপ গুণে দেখা গেল ৭২২ হচ্ছে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে আবারও গুণতে হবে।
ভিভিপ্যাট যন্ত্র আসলে কী?
ভিভিপ্যাট যন্ত্রটি আসলে একটি প্রিন্টার। ইভিএমে ভোট দেয়ার পর ভোটার নিজেই ওই প্রিন্টার থেকে ছাপা হয়ে বের হওয়া কাগজের স্লিপে দেখে নিতে পারবেন যে তিনি যেখানে ভোট দিয়েছেন, সেখানেই ভোট পড়েছে কিনা।
তবে ওই প্রিন্টার থেকে কাগজের স্লিপটি ছিঁড়ে নেয়া যাবে না, শুধু চোখে দেখা যাবে। নাগাল্যান্ড বিধানসভার নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভিভিপ্যাট পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম চালু করা হয়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আটটি কেন্দ্রে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।
২০১৭ সালে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে সব বুথেই ব্যবহৃত হয়েছিল ভিভিপ্যাট। আর এবার দেশটির সব কেন্দ্রের বুথে এই যন্ত্র লাগানো হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠত, ইভিএমে এক প্রার্থীকে ভোট দেয়া হলেও অন্য প্রার্থীর কাছে সেই ভোট চলে যাচ্ছে।
ভোট পরিচালনায় আরও স্বচ্ছতা আনতেই ভিভিপ্যাট যন্ত্র ব্যবহার শুরু করে নির্বাচন কমিশন। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রতিটি কেন্দ্রের ৫টি করে বুথের ভিভিপ্যাট যন্ত্রের সঙ্গে ইভিএমের ভোট মিলিয়ে দেখতে হবে।
বিরোধী দলগুলো আদালতে মামলা করেছিল এই দাবী নিয়ে যে কেন্দ্র পিছু অন্তত ৫০ শতাংশ বুথেই এই নিয়ম চালু হোক। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আদালতকে বলেছে, সেটা করতে গেলে ফল ঘোষণা হতে পাঁচদিন সময় লেগে যেতে পারে।
দুই দশক আগে পর্যন্তও যখন সব বুথে ইভিএম ব্যবহার করা হতো না, ব্যালটে ভোট নেয়া হতো। তখন গণনা শেষ হতে দুই থেকে তিনদিন পর্যন্ত সময় লাগতো।
একেকটি ব্যালট বাক্স প্রার্থীর অ্যাজেন্টদের সামনে নিয়ে এসে সিল ভেঙে ফেলা হতো। একই কেন্দ্রের নানা বুথের ব্যালট বড় বাক্সে মিশিয়ে তারপরে একেকটি গোছা ব্যালট পেপার নিয়ে গণনা কর্মীরা প্রার্থীদের নাম লেখা খোপ কাটা বাক্সে ভরতেন প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের দেখিয়ে নিয়ে।
তারপর ব্যালট একটি একটি করে গণনা করা হতো। দিনরাত ধরে চলত ভোট গণনা; যতক্ষণ না চূড়ান্ত ফল বের হয়। কিন্তু ইভিএম আসার পর থেকে একটি বোতাম টিপলেই ওই যন্ত্রে কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন, সেই সংখ্যাটি ডিসপ্লে স্ক্রিনে চলে আসে।