কৃষি পণ্য'র ন্যায্য মূল্যের জন্য সরকারে কাছে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবিগুলো তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কৃষকের পণ্য ন্যায্য মূল্য, বিশেষ করে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি, কৃষি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, কৃষি ঋন মৌকুফ করার দাবি জানাচ্ছি। কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য সমপরিমান টাকা বিনা সুদে প্রদান করা, সরকারী পর্যায়ের ধান চাল গুদামজাত করনের ক্ষমতা হলো প্রায় ২১.৮ লাখ মেট্রিক টন। এই ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বেশি পরিমানে সরকারকে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের সহায়তা দিতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বেসরকারী গুদাম ভাড়া করে সেখানে ধান চাল সংগ্রহ করতে হবে, কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমান ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করছি, কৃষকদের হয়রানি কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে, প্রান্তিক চাষী ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে, দেশে ধান উৎপাদন সম্পর্কে সরকার মিথ্যাচার করছে, মৌসুমের আগেই ধানের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করা এবং সংগ্রহ মূল্য অবশ্যই উৎপাদন খরচের চেয়ে যৌক্তিক পরিমান বেশি হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দাতা কৃষক পরিবারের অবস্থা আজ খুবই নাজুক ও দূর্বিসহ। কিন্তু কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ। দেশের প্রায় ১.৫ কোটি কৃষক পরিবারের আজ ত্রাহি অবস্থা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কৃষকদের বিশেষ করে ধান চাষীদের চাওয়া হচ্ছে-সরকার ন্যায্য মুল্যে চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। কৃষকদের চাওয়া খুবই সামান্য ও যৌক্তিক। আমরা কৃষকদের এই যৌক্তিক দাবির সাথে একমত।’
তিনি বলেন, ‘চাল আমদানির ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে, সরকারের অংশীদারী একটি দলের প্রধান সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও চাল আমদানিতে সরকারের দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও সরকারি দলের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন-ও এহেন পরিস্থিতির জন্য এ সরকারের সাবেক খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত বছরের উৎপাদনকে হিসেবে নিলে বোরো ধানের উৎপাদন হবে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন। আর সরকার সংগ্রহ করবে মাত্র ১৩ লক্ষ টন, যা উৎপাদনের মাত্র ৬.৫ শতাংশ। আমাদের দাবি ধান অথবা চাল সংগ্রহের পরিমান কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা হোক। এতে বেশি পরিমান কৃষককে সহায়তা দেয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপী ঋণের পরিমান প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা। এই খেলাপী ঋণ গ্রহিতাদের জন্য সরকার বিশেষ ছাড় দিয়েছে। যদিও এই ছাড় মহামান্য হাইকোর্ট আটকে দিয়েছে। (প্রথম আলোঃ ২২.৫.২০১৯)। সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধকলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এই খেলাপী ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে সরকার আরো প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবে। বর্তমানে কৃষকদের যে দুরাবস্থা তা দুর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শীতার কারণে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। বার বার গরীব কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য আজ বড়ই প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধিনে খুব দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনে মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।