ক্রিকেট রানের খেলা- এই কথার সাথে দ্বিমত হয়ত অনেকেই করবেন। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচে রান দেখতে চান না এমন সমর্থক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সমর্থকদের মতো দলগুলোও চায় রান করতে। তা যদি আবার হয় বিশ্বকাপের মতো আসর। তাহলে তো কথাই নেই।
সামর্থ্যের সবটুকু উজার করে দিয়ে রানের ফোয়ারা ছুটাতে চান ব্যাটসম্যানরা। তবে মাঝে মাঝেই তারা ব্যর্থ হন, সঙ্গে দলও। এ আয়োজনে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপের সবচেয়ে বাজে পাঁচ ব্যাটিং বিপর্যয়:
অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সেমি ফাইনাল, ১৯৯৬ বিশ্বকাপ
সে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র বিশ রানে প্রথম চার উইকেট হারায় অসিরা। কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপের বোলিং তোপ সামলান দুই অসি ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্ট ল ও মাইকেল বেভান। এছাড়া শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ২০৭ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া।
এই পুজিঁতে মোহালির ব্যাটিং পিচে জয় সম্ভব নয় বলেই মনে করেছিলো সবাই। তবে লারাকে স্টিভ ওয়াহ ও চন্দরপলকে গ্ল্যান ম্যাকগ্রাহ ফিরিয়ে দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থামে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৭ রান আগেই। উইন্ডিজদের সাত রানে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় অসিরা। ক্যারিবিয়দের এমন হার, ইতিহাসের অন্যতম বাজে ব্যাটিং বিপর্যয়ের নিদর্শন।
পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড
গ্রুপ পর্ব, ১৯৯২ বিশ্বকাপ
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে পাকিস্তান। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ। ব্যাটিংয়ে নেমে ডেরেক প্রিংলে এবং ফিল ডিফ্রেটিসের বোলিং তোপে মাত্র ৩২ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তানরা। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস থামে ৭৪ রানে।
পরে বৃষ্টির কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ১৬ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬৪ রানের। কিন্তু উইন্ডিজরা ৮ ওভার ব্যাটিং করার পর আবার বৃষ্টি আসায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তানের এমন ব্যাটিং, বিশ্বকাপ ইতিহাসের বাজে ব্যাটিং বিপর্যয়গুলোর একটি।
কানাডা বনাম বাংলাদেশ
গ্রুপ পর্ব, ২০০৩ বিশ্বকাপ
সেই সময়ে বাংলাদেশ ও কানাডা দু্ই দলই ছিলো প্রায় সমশক্তির। কানাডা ১৯৭৯তে প্রথম বিশ্বকাপ খেললেও বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। প্রথমে ব্যাটিং করে কানাডা সংগ্রহ করে ১৮০ রান।
মাঝারি টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে ভালোই শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ছয় ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই তুলে নেয় ৩০ রান। তবে এরপরই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ। কানাডার বোলার
অস্টিন কোডিংটনের পাঁচ উইকেট শিকারে তারা জয় পায় ৬০ রানের বড় ব্যবধানে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম বাজে ব্যাটিং বিপর্যয় এটি।
ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ফাইনাল, ১৯৮৩ বিশ্বকাপ
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ভারত ছিলো আন্ডারডগ। কিন্তু তারা সেবার ফাইনাল জিতে প্রমাণ করেছিলো কোনো দলকেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় ক্লাইভ লয়েডের শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
ফাইনালে টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সন্দীপ প্যাটেল ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ১৮৩ রান তুলে ভারত। এই ম্যাচ জয়ের জন্য বোলিংয়ে দারুণ কিছু করতে হতো তাদের।
তারা সেই আভাসটা পেলো ভারতীয় বোলার মদন লালের ওভারে-তার ওভারে ভিভ রিচার্ডসের অসাধারণ এক ক্যাচ লুফে নেন অধিনায়ক কপিল দেব। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে উইন্ডিজরা, শেষ পর্যন্ত সব উইকেট হারিয়ে তাদের ইনিংস থামে ভারতের চেয়ে ৪৩ রান কম করে। বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম বড় ব্যাটিং বিপর্যয় এটি।
ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ফাইনাল, ১৯৭৯ বিশ্বকাপ
আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবারও ওঠে ফাইনালে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবেই স্বাগতিকদের প্রতি প্রত্যাশা ছিলো বেশি। সে অনুযায়ী দারুণ শুরুও করে তাদের বোলারররা। ৯৯ রানে ক্যারিবিয়দের চার ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠায় সাজঘরে। তবে স্যার ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় নির্দিষ্ট ৬০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৮৬ রানের।
জবাব দিতে নেমে জিওফ্রে বয়কটের সেঞ্চুরিতে জয়ের পথেই ছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ, ডেভিড গাওয়ার সহ শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৯২ রানে ম্যাচ হারে তারা। ইংল্যান্ডের এমন ব্যাটিং বিপর্যয় বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম বাজে ব্যাটিং বিপর্যয়।