নির্ধারিত সময়েই শেষ হচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। নিয়ম অনুযায়ী অক্টোবরেই সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে সেটি অনুষ্ঠিত না হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাংগঠনিক দিক বিবেচনায় কিছুটা পেছানো হতে পারে দলটির জাতীয় সম্মেলনের সময় সীমা।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারনী সূত্রে জানিয়েছে, সম্মেলনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় বর্ধিত সভা পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে জেলা ও উপজেলা কমিটি পূর্নাঙ্গ করারও কথা রয়েছে। যেসব জেলা ইউনিটে দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি, সেসব ইউনিটের সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ফলে আগামী অক্টোবরে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়ে উঠতে নাও পারে।
জানা গেছে, ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই তৃণমূলের কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তৃণমূলের অভিজ্ঞ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সকল বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে কাজ করে যাচ্ছেন। টানা তিন মেয়াদে সরকারের দায়িত্ব পেয়ে সাংগঠনের দিকে নজর দিতে পারেনি দলটি। তাই সম্মেলনের আগেই নড়বড়ে সাংগঠনিক কাঠামোকে একটি শক্তিশালী রূপ দিতে চায় ৮ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক টিম। তাই সময় নিয়ে সংগঠন গোছাতে মনযোগী হয়েছে দলটির হাই কমান্ড। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৮ বিভাগে আটটি সাংগঠনিক ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে এবং তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে এসব টিম গঠন করা হয়। টিমগুলোর নেতৃত্বে আছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। এরই মধ্যে এসব টিম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় বর্ধিত সভা শেষ করেছে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় টিম, আর যেসব ইউনিটে এখনো বাকি আছে সেগুলো ঈদের পরপরই অনুষ্ঠিত হবে। সকল ইউনিটের বর্ধিত সভা সমাপ্তির পরই শুরু হবে জেলা ও উপজেলা ইউনিটগুলোর সম্মেলন প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে জাতীয় সম্মেলনের সময়সীমা কিছুটা বাড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন কবে নাগাদ ঘোষণা হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের সম্মেলন যথা সময়েই অনুষ্ঠিত হবে, সে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বর্ধিত সভা সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ যেহেতু একটা বড় দল, সেহেতু এখানে বিভিন্ন ধরণের মতভেদ মতনৈক্য থাকে। মতভেদ বা নিজেদের ভেতর বিভেদগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নিষ্পত্তি করারও বিষয় রয়েছে। তাছাড়া কাউন্সিলর তালিকা প্রস্তুত করা। প্রথমত সম্মেলনের তারিখটা নির্দিষ্ট করা এবং এটি যথার্থ অর্থেই আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি ঠিক করবেন। তারিখ ঠিক করার পর সম্মেলন প্রস্তুতি নিতেও বেশ কিছু দিন সময় লাগে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যেই বেশির ভাগ জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সম্মেলনের দিন এসব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়নি। বেশির ভাগ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে সময় লেগেছিল এক-দেড় বছর। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ময়মনসিংহ মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কমিটি ঘোষণা হয় সম্মেলন ছাড়াই। দলটির ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জেলারই সম্মেলন হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্মেলনে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এসব জেলা কমিটির মেয়াদও এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
এদিকে সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অন্তত হাফ ডজন নেতা তাদের কর্মকাণ্ডে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও সারা দেশের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রতিবারই আকর্ষণের জায়গা তৈরি হয় দলের সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে। দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় দলের অন্য নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে এ পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। সম্মেলন ঘিরে তৎপরতা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন না। তারা বলছেন, আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে সারা দেশের তৃণমূলে সম্মেলনের প্রস্তুতি কার্যক্রম চলছে। এ মহাযজ্ঞে দলের নেতারা কাজ করছেন।