বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্যে তিন দিনের নয়াদিল্লী সফর শেষে দেশে ফিরেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ শুক্রবার বিকালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বুধবার তিনি ভারত গিয়েছিলেন।
শুক্রবার দেশে ফেরার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে অংশীদার হতে চায় ভারত। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন গণমাধ্যমকে একথা জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে দুই দেশ যৌথ উদ্যোগ নিলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব পাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রেও তা ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন মোদি।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শুরু হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওই যুদ্ধে কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকারে ফেরার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা জানানো হয়। পরবর্তীতে সম্মাননা পান ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
২০১৫ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ সফরে এসে বাজপায়ীর পক্ষে সেই সম্মাননা স্মারকটি নেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুক্রবারের বৈঠকে, দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে এবং সেজন্য দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন মোদি।
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টিও এদিন আলোচনায় আসে। ভারতে কংগ্রেস আমল থেকে আটকে থাকা ওই চুক্তির জট ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার পরও খুলতে পারেননি মোদি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে বিষয়টি ঝুলে আছে।
বাংলাদেশের জনগণ যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সমাধানের বিষয়ে গভীরভাবে আগ্রহী, সে কথা রাষ্ট্রপতি বৈঠকে তুলে ধরেন।
জবাবে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিস্তাসহ দুই দেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিৎ বলে ভারত মনে করে। সেজন্য যৌথ নদী কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা হয় ওই বৈঠকে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ সমস্যা শুধুমাত্র বাংলাদেশর একার নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নিরাপত্তা হুমকি। এ সমস্যার সাধাধানে ভারতের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতও মনে করে এটা বাংলাদেশের একার সমস্যা না। একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ভারত সব সময় আন্তর্জাতিক ফোরামে সোচ্চার থাকবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
দিল্লীর হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকের পরপরই দেশে ফিরে আসেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।