দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। স্বামী নিহত হওয়ার আগপর্যন্ত গৃহবধূই ছিলেন খালেদা জিয়া। দুই ছেলেকে লালন-পালন ও ঘরের কাজ নিয়েই সময় কাটাতেন। জিয়াউর রহমান দেশের প্রেসিডেন্ট হলেও রাজনীতিতে তার তেমন উপস্থিতি ছিল না।
পরে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে একসময় তাকে রাজনীতিতে নামতে হয়েছে। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদোন্নতি পান। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে তিনি ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এ সময়েও অনেক রাজনীতিবিদদের স্ত্রীদের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। এমন নেত্রীর সংখ্যা বিএনপিতেই বেশি। তবে তাদের স্বামীরা বেশিরভাগই নানা দণ্ডে দণ্ডিত। রাজনীতিতে তারা জনসেবা করতে আসছেন নাকি স্বামীর জায়গা দখল করতে এসেছেন সেই প্রশ্ন তো রয়েছেই। বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই রাজনীতিতে অক্ষম হয়ে যাচ্ছেন। তাদের অনুপস্থিতেতে রাজনীতিতে ভীড়ছেন স্ত্রীরা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী শাহিদা রফিক ঢাকা-১৬ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। রফিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকলেও তার স্ত্রী অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক বিএনপিতে সক্রিয় আছেন।
সিলেট-২ থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তিনি সিলেটে ইলিয়াস আলীর পর বেশ প্রভাব বিস্তার করছেন। লুনাকে বিএনপি থেকে ওই আসনে গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হলেও প্রার্থিতা আদালতে স্থগিত হওয়ায় রুশদীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খান। নির্বাচনে মোকাব্বির জয়লাভও করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহধর্মিণী ফরহাত কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম-৭ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় নেই। দেশের বাইরেই বেশি সময় কাটান।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী। তিনিও এখন বিএনপির রাজনীতিতে ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছেন বলে জানা যায়।
অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেলেও সালাহউদ্দিনের দেশে ফেরা হয়নি। তার স্থানে নির্বাচনে লড়েছেন স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। তিনি কক্সবাজার-১ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
মির্জা আব্বাস রাজনীতি থেকে সরে না গেলেও কিছুটা আড়ালে যে চলে গেছেন সেটা বোঝা যায়। তিনি যতটা আড়ালে যাচ্ছেন ততটাই সক্রিয় হচ্ছেন তার স্ত্রী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস। তিনি ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচনও লড়েছেন।
ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত নাসিরউদ্দীন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি দলে থেকে নির্বাচিত হননি।
প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন আরা সিদ্দিকীও বিএনপির রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়েছেন। গেল সংসদ নির্বাচনে তিনি নওগা- ৩ আসন থেকে নির্বাচনেও লড়তে চেয়েছেন।
পঞ্চগড়-২ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য মোজাহার হোসেনের স্ত্রী নাদিরা আখতার, নাটোর-১ আসনে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী কামরুন্নাহার শিরীন ও চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবিরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।
এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর স্ত্রী শামীমা বরকত লাকী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রুমানা মাহমুদ ২০০৮ সালে সরাসরি ভোটে জিতেছিলেন। তারা কমবেশি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সহধর্মিণী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, টি এস আইয়ুবের স্ত্রী তানিয়া রহমান সুমী, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আফসার আহমেদ সিদ্দিকীর স্ত্রী জাহানারা বেগম।
কাজী সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ ও শরীয়তপুর-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য হেমায়েত উল্যাহ আওরঙ্গর স্ত্রী তাহমিনা আওরঙ্গরাও এখন বিএনপির রাজনীতিতে ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছেন।
বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই নিজেকে রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর মতো রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও ইদানিং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে তাকে দেখা যায়।