এবার তার দলকে নিয়ে প্রত্যাশার মাত্রা অনেক বেশি, এক কথায় আকাশ ছোঁয়া। আবেগ-উত্তেজনায় কাঁপছে গোটা দেশ। একটা অন্যরকম প্রত্যাশার বেলুন আকাশে উড়ছে এবার। আগের যেকোন বারের চেয়ে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে এবার বাড়তি প্রত্যাশা।
সবার বিশ্বাস ও আস্থা, ২০০৭ সালে সুপার এইটের পর ২০১৫ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। আর ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগাররা ভারতের সাথে সেমিফাইনাল পর্যন্ত লড়াই করেছে।
তাই কারো কারো বিশ্বাস, এবার হয়ত অতীতকে পিছনে ফেলে আরও ভাল কিছু করবে টিম বাংলাদেশ। অনেকেই প্রিয় দলকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ভাবছেন। কেউ কেউ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নও দেখছেন। ভক্ত-সমর্থক তথা দেশবাসীর নাড়ীর খবর জানেন অধিনায়ক মাশরাফিও।
এও জানেন, সেই বাড়তি প্রত্যাশায় একটা বাড়তি চাপও সৃষ্টি করতে পারে। যা দলের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলতে পারে বেশি। সেই বোধ ও উপলব্ধি থেকেই মাশরাফি প্রথম ম্যাচের আগে ভক্ত-সমর্থক এবং নিজ দলের ক্রিকেটারদেরকে একটি বিশেষ বার্তা দিয়েছেন।
পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাড়তি আবেগ-উচ্ছাস থাকতেই পারে। প্রত্যাশা থাকাও দোষের না। তবে মনে রাখতে হবে প্রত্যাশা যেন আবার চাপ বয়ে না আনে। কারণ, দল চাপ নিয়ে নিলে ভাল খেলায় সমস্যা হতে পারে।
তাই অধিনায়ক মাশরাফি একদম সহজ সরল হিসেব কষে মাঠে নামতে আগ্রহী। তার চোখে আজকের ম্যাচে তার দল বাংলাদেশ ‘আন্ডারডগ’। ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে এবার যেমন ইংল্যান্ড ছিল ফেবারিট। কালকের ম্যাচে তার দল থাকবে আন্ডারডগ, আর ফেবারিট প্রোটিয়ারা।
তার সোজা সাপটা উচ্চারণ, ‘আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি যেটা নেওয়ার ছিল আমরা নিয়েছি। হয়তো ইনজুরি নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। আশা করি তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে। আমাদের কিছু মূল খেলোয়াড়ের ছোট খাটো কিছু চোট আছে। এগুলো নিয়েই খেলতে হয়। আমাদের অনেকেই চিন্তা করছে, আমরা বিশ্বকাপ জিতে গেছি, সেমিফাইনাল খেলছি- এগুলো চিন্তা করা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। কোন জায়গা থেকেই আমরা ফেভারিট না। উইকেট বলেন যাই বলেন। ইভেন কালকের ম্যাচও দক্ষিণ আফ্রিকা ফেভারিট হিসেবে খেলবে।’
এইটুকু শুনে আবার ভাববেন না, মাশরাফি রনে ভঙ্গ দিয়ে বসে আছেন। আসলে মাশরাফি নিজ দলের শক্তি ও সামর্থের ওপর আস্থা রেখে কথা বলেছেন। আর তাই তো মুখে এমন কথা, ‘এমন নয় যে আমরা ছেড়ে কথা বলবো। ওখানে আমাদের সেরাটা খেলবো। আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। অবশ্যই চাইবো জিততে। আমরা কোন জায়গা থেকেই ভাবছি না, আমরা ম্যাচটা হেরে যাবো। কিন্তু হাইপের কথা বললে, অনেকেই মনে করে ওখানে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবো। যারা ক্রিকেট বিশ্লেষণ করছে, তারা আমাদের পিছিয়ে রাখছে, কিন্তু আমরা যুদ্ধ করছি। এগুলো চলবে একটা টুর্নামেন্টের আগে। আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ, আমরা কিভাবে সফল হয়েছি- সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই খেলতে হবে।’
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ, অনেক বেশি চিন্তা ভাবনার দরকার নেই। বেশি চিন্তা করলে চাপ বাড়বে। নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা আর খেলা সম্ভব হবে না। তাই কালকের ম্যাচকে অন্য সব সময়ের মত এক ম্যাচ ভাবার তাগিদ অধিনায়ক মাশরাফির, ‘এটা আমাদের জন্য এটা সাধারণ একটা ম্যাচ, এমন হিসেবেই আমরা খেলতে নামব।’
খেলোয়াড়দের একদম অতিমাত্রায় সিরিয়াস না হবার তাগিদ দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের এভাবেই বিষয়গুলো দেখতে হবে। মাঠে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতে হবে।’
তার ধারণা, করণীয় কাজগুলো করার সময় অতিমাত্রায় সিরিয়াস না থেকে একটু নরমভাবে করতে পারলে নিজেদের সেরাটা দেয়া সহজ হয়। আর বাইরের কথা কানে কম নেবার তাগিদ কিন্তু আছে, ‘প্রত্যাশার কথা শুনে যদি আমরা মাঠে ঢুকি, তাহলে আমাদের উপর চাপ পড়বে।’
অধিনায়কের ভাবনা, এবার আগের যে কোন সময়ের চেয়ে তার এবং দলের কাছে প্রত্যাশা বেশি, তাই চাপও বেশি। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় এবার প্রত্যাশা কিছুটা বেশি।’ মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘আপনাদের থেকে শুরু করে সবাই প্রত্যাশা করছে আমরা ভালো করবো। প্রত্যাশা খারাপ না, সেটা অনেক সময় সেরাটা বের করে আনে। আমার কথা হচ্ছে, প্রত্যাশা যেন চাপ তৈরি না করে। মূল কাজটাতে আমাদের ফোকাস রাখতে হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার চাপ নিয়ে নামবে, এটা কি বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সুবিধা কিনা? উত্তরে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের কোন অবস্থান রেখেছিল এটা একটা ভাবনার বিষয়। ইংল্যান্ডের সবাই ফেভারিট ধরেই ম্যাচ খেলতে নামবে। আমাদের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ২ পয়েন্ট হিসেবে করে আগাবে। আমরা যেমন চিন্তা করছি, আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। হয়তো ওদের কিছুটা চাপ থাকবে, এটা খুব স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য কিছুটা সুবিধা। ওরা যদি ধরেই রাখে এই ম্যাচ থেকে দুই পয়েন্ট। আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইংল্যান্ডের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হার গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে আসল কাজ মনে হয় পরিকল্পনাগুলো সঠিক ও যথাযথভাবে মাঠে বাস্তবায়ন করা।’