বিশ্বকাপে এই পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ, আরেক ম্যাচ ভেসেছে বৃষ্টিতে। ওই দিন ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্যের কাছাকাছি করতে পারেননি মাশরাফি বা তামিম কেউই। দুই ম্যাচে বোলিং কোটা পূরণ করেননি অধিনায়ক। যদিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাতাসের বিপক্ষে বল করে জুতসই ছিল তার পারফরম্যান্স। তিন ম্যাচে থিতু হয়েও তামিম ফেরেন ১৬, ২৪ আর ১৯ রানে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে দল যখন ভালো অবস্থানে থাকে না তখনই হঠাৎ করে অনেক ‘ক্রিকেট পন্ডিত’ জন্ম নেন! আর ফেসবুক কেন্দ্রিক এই ক্রিকেট পন্ডিতরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পরামর্শ দিচ্ছেন। সমালোচনায় ধুয়ে ফেলছেন বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার অজিত আগারকার কদিন আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজাকেই বসিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অধিনায়কের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার কাছাকাছি না হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে সমালোচনা মুখর। আগারকারের নাম না নিয়ে তামিম ইকবাল দিলেন কড়া জবাব। দেশের মানুষকেও মাশরাফির অবদান স্মরণ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
টন্টনের সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মাঠে ব্যাটিং অনুশীলনের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফী প্রসঙ্গে অনেক কথাই বললেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। মাশরাফির বিপক্ষে সব সমালোচনা শুনেছেন তামিম। তাইতো সংবাদ সম্মেলনে তামিমের ভাষ্য, ‘কথাটা বলে কারা। এটা হলো গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার কথাটা বাদ দেই, মাশরাফি ভাইয়ের কথাটাই ধরি। যারা এটা নিয়ে লিখছে বা আলোচনা করছে। তারা ওটা লেখার আগে বা বলার আগে যদি দুইটা মিনিট একটু চিন্তা করে যে আমি কার ব্যাপারে বলছি। সে কি করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য গত ১৫-১৬ বছর ধরে।’
‘এখন ধরেন সে আনফিট! যদি আনফিটের কথা বলতে হয় সে দশ বছর ধরেই আনফিট। তার দুইটা হাঁটু তো কোনো সময়ই ভালো ছিল না। তখন কিন্তু আমরা সেটা আবেগ দিয়ে দেখেছি। এখন হয়তবা পারফরম্যান্সে একটু উনিশ-বিশ হচ্ছে, আমরা এটাকে অনেক বড় করে দেখছি। এমন একজন ব্যক্তির ব্যাপারে আমরা বলছি যে, ওই ব্যক্তির হাত ধরেই আজ কিন্তু আমাদের এখানে আসা। দল হিসেবে তো বটেই আমার নিজেরও।’
‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক মনে হয় আমার কাছে। কারণ উনি যা করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশে ক্রিকেটকে এখানে আনার জন্য। উনার ব্যাপারে এইভাবে মন্তব্য করা বা এভাবে আলোচনা করা সত্যিই খুব দুর্ভাগ্যজনক। সে অনেক বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। সে যা দিচ্ছে! কিছু কিছু বিদেশি মানুষ বলেছে আমি শুনেছি। তো উনারা নিজেদের জীবনে কি করেছেন? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল এটা। ওনারা নিজেদের জীবনে কী করেছেন যে একটা মানুষকে নিয়ে এভাবে বলা! দেশের বাইরের মানুষ কী বলছেন এটা নিয়ে ভাবছি না। সবাই মতামত দিতে পারেন। কিন্তু দেশের মানুষের এটা বোঝা উচিত আমি যখন মাশরাফী বিন মর্তুজার ব্যাপারে একটা কথা বলছি তিনি দেশের জন্য কী করেছেন।’
আগারকারের কথা প্রসঙ্গ উঠতেই আগারকারের ক্যারিয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে তামিম বলেন, ‘বিদেশি কিছু কিছু ক্রিকেটাররা কথা বলেছেন শুনেছি। আমার প্রশ্ন হলো ওরা নিজেদের জীবনে কি করেছেন। নিজে কি এমন করেছেন যে এভাবে বলছেন।’
তামিম আরো বলেন, ‘একজন ক্রিকেটারের জীবনে ভালো-মন্দ সময় যাবো। কখনো ভালো খেলবে। কখনো ভালো খেলবে না। শুধু ভালো খেললেই যে সঙ্গে থাকবেন তা তো না। যখন কোনো ক্রিকেটার খারাপ খেলবে তখনো তার পাশেই থাকতে হবে। এরকম মেগা ইভেন্টে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় কিন্তু ভালো খেলে না। এই বিশ্বকাপের যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে সেই দলেরও সব খেলোয়াড় কিন্তু ভালো খেলবে না। এগারোজনই ভালো খেলে না। কিছু খেলোয়াড় থাকবেই যারা অফফর্মে থাকবে। আশা করছি মানুষ সামনের সময়টায় সমালোচনা না করে ক্রিকেটারদের অবদানের কথাই বেশি মনে রাখবে!’