দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেরেই চলেছ। চলতি বছর এই জ্বরে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৩২ জন। মৃত্যু হয়েছে চার জনের। এদের একজন শক সিন্ড্রোমে মারা গেছেন। অবশিষ্ট তিন জন হেমোরেজিক (রক্ত বের হয়ে মৃত্যু) হয়ে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পরিসংখ্যান থেকে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার কয়েকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৪ জন। ডেঙ্গু জীবানুবাহী এডিস মশা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘরের মধ্যেই বাস করে। ঘরের মধ্যে মশা বাস করার স্থান ৩-৪ দিন পর পর পরিষ্কার করতে না পারলে এ মশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে একটি জরিপ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে । জরিপের পর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কা কম। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩ ওয়ার্ডের একশ’টি এলাকায় দুই হাজার বসতবাড়িতে এই জরিপটি চালানো হয়। এর মধ্যে ১৯ স্থানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মশার পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বাহী মশার তেমন উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এসব এলাকার ৯৭ শতাংশে এ্যানোফিলিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই মশা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুণিয়ার জীবানু বহন করতে পারে না। বড় জোর ম্যালেরিয়া হতে পারে এ্যানোফিলিস মশা থেকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য কিটস সরবরাহ করা হয়েছে। এ হাসপাতালগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসকদের স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কারণ নেই, বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের তথ্যানুসারে ২০০২ সালে দেশের মানুষ সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়।
ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ছয় হাজার ২০০ জন। তবে ডেঙ্গু মশায় বেশি মৃত্যু হয় ২০০০ সালে এবং মারা যায় ৯৩ জন। তবে ২০১৬ সালে আক্রান্ত ছয় হাজার ৬০ জন এবং মারা যায় ১৪ জন। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় দুই হাজার ৭৬৯ এবং মারা যায় আট জন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ সময়টা জ¦রের সময়। রাজধানীর বেশির ভাগ ঘরেই শিশুরা এমনকি বয়স্করাও জ্বরে ভুগছে। ভাইরাসজনিত কারণের জ্বরটাই বেশি। জ্বর হলেই ডেঙ্গু অথা চিকুনগুণিয়া হয়েছে তা ভেবে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, ভাইরাস জ্বরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্মণ রয়েছে। আবার ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুণিয়ায় ভুগলে তারও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্মণ প্রকাশ পাবে শরীরে। ভাইরাস জনিত রোগ যা এডিস মশা কামড়ে সাধারণত: ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বর ভালো হয়ে যায়, তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম হয়ে গেলে তা রোগীর জন্য মারাত্মক হতে পারে। এমন হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪-১০৫ ডিগ্রি (ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠতে পারে। সাথে মাথা ব্যথা, মাংসপেশী, চোখের পেছনে ও হাড়ে প্রচন্ড ব্যথা, ত্বকে লালচে ছোপ (র্যাশ) দেখা দেবে। এ সময় রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারীর ভেতরে বিশ্রামে রাখতে হবে। জ্বরে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাতেই এসপিরিন (এনএসএআইডি) জাতীয় ওষুধ দেয়া যাবে না।
হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
এডিস মশা সাধারণত বাড়ির ভেতরে ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের তলায় ও আশে-পাশে পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা জমাকৃত পানিতে ডিম পাড়ে। এ মশা সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে কামড়ায়।