‘ব্যাংকে টাকা নেই’ এমন অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকে টাকা থাকবে না কেন? অবশ্যই টাকা আছে। তবে লুটে খাওয়ার টাকা নেই। সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এর আগে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল ৩টায় এ অধিবেশন শুরু হয়।
‘ব্যাংক খাতে লোপাট’ প্রসঙ্গে বিএনপি সরকারের সময়ের ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংক খাত যারা লুট করে নিয়ে গেছে তারা দেশান্তর হয়ে পড়ে আছে অথবা দুর্নীতির দায়ে কারাগারে বন্দি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি এ রকম বহু ঘটনা আছে। সময় এলে এ ব্যাপারে আরও আলোচনা করতে পারবো।
বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট নিয়ে ভেতরে-বাইরে অনেক কথা হচ্ছে। কেউ কেউ এমনও বলছেন বাজেট নাকি কিছুই না। যারা এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে কথা বলছেন তাদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন- বাজেট সঠিক না হলে মাত্র দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এতো উন্নতি করলো কী করে?
তিনি বলেন, কেউ বলছেন- বাজেট দিয়েছেন, বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বাজেট যদি বাস্তবায়ন করতে না পারি তাহলে ২০০৮ সালে মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেয়েছিলাম, আজকে সেখানে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে গেছি। বাস্তবায়নের দক্ষতা না থাকলে এটা করলাম কীভাবে?
সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় তিনি আরও বলেন, সরকারের উন্নয়নের অভিষ্ঠ লক্ষ্য অর্জন, জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়। এই প্রাক্কলন করতে গিয়ে সঙ্গত কারণেই আমরা কিছুটা বেশি করি। রাজস্ব আদায়ে খানিকটা উচ্চাভিলাসী হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমৃদ্ধির পথে গত এক দশকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অসম্ভবকে সম্ভব করা, অজেয়কে জয় করা, দুর্ভেদ্যকে ভেদ করারই গল্প। আমাদের উচ্চাভিলাস না থাকলে এসব অর্জন সম্ভব হতো না। বাজেট বাস্তবায়ন, পরিসংখ্যান সবই প্রমাণ করে আমাদের লক্ষ্য সব সময়ই বাস্তবভিত্তিক ছিল। বাস্তবতার কারণেই আমাদের বাজেটে কিছুটা সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্ধনের প্রয়োজন হয় এবং প্রতি বছরই আমরা এটা করে থাকি। এটা সব দেশের বাজেটেই হয়ে থাকে।
বক্তব্যকালে তিনি সম্পূরক বাজেটে হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ অনুমান করেছিলাম। সংশোধিত বাজেটে তা আমরা ৮.১৩ শতাংশ হবে বলে আজ অনুমান করছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৬ শতাংশ নির্ধারণ হয়েছিল, এটি আমরা সাফল্যজনকভাবে অতিক্রম করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অনুমান করা হলেও সংশোধিত মূল্যস্ফীতি ধারণা করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অত্যন্ত সতর্ক থাকার জন্যই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলেই আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। এটা দেখে সারাবিশ্ব আজ অবাক হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে এখন উন্নয়নের বিস্ময়। যেখানে যাই সেখানেই সেই কদরটা পাই। দেশবাসী সেই সম্মানটা পায়। কাজেই অযথা কিছু কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। আমরা কাজ না করলে দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নেমে আসতো না। এই ২১ ভাগ থেকে দারিদ্রের হার আরও নামিয়ে আনবো।