ঝর্ণা ও জুলেখা দুই বান্ধবী। দুই বান্ধবীই দেহ ব্যবসা করত। এক সময় ফিরে আসে ওরা। বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। সম্প্রতি ঝর্ণার তৃতীয় স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু ভালোই চলছিল জুলেখার সংসার। জুলেখার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল ফুটপাথ ব্যবসায়ী সেলিমের। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই জুলেখাকে বিয়ে করে সেলিম। এরপর ওই পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে জুলেখাকে।
এ দিকে সম্পর্ক নষ্ট হয়নি দুই বান্ধবীর। তাদের মধ্যে বোঝাপড়াও ছিল ভালো। থাকতও পাশাপাশি এলাকায়। একে অপরের বাসায় আসা-যাওয়াও ছিল। কিন্তু বাদসাধে ঝর্ণার একটা কথা। বেশ কিছু দিন ধরে ঝর্ণা জুলেখাকে দেহ ব্যবসায় জড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। বিষয়টি কানে যায় সেলিমের। ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা আঁটে ঝর্ণাকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১৯ জুন ফুটবল বিশ^কাপের খেলা দেখতে হোসনে আরা বেগম ঝর্ণাকে (৩০) ডেকে আনা হয় জুলেখার বাসায়। রাতে খাবারও খায় সবাই একসাথে। তখনো ঝর্ণা বুঝতে পারেনি ওই রাতটাই ঝর্ণার জীবনে শেষ রাত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঝর্ণাকে এক গ্লাস দুধ দেয় জুলেখা। দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ঝর্ণা। এরপর জুলেখা (২৯) ও তার স্বামী মজিবুল হক সেলিম (৪৪) মিলে বালিশচাপায় শ^াসরোধে হত্যা করে ঝর্ণাকে। ওই রাতেই লাশ ঘরে রেখে বাইর থেকে তালা মেরে পালিয়ে যায় স্বামী-স্ত্রী। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চৌরাস্তার তাজ সুপার মার্কেটের পাশের একটি বাসায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর গত ২৩ জুন অজ্ঞাত পরিচয়ে ঝর্ণার লাশ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থানার এসআই রেদওয়ান খান জানান, প্রথমে অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে নিহতের পরিচয় মিলে। ঝর্ণা চাঁদপুর জেলার হানিফ মিয়ার মেয়ে। খোঁজ পেয়ে তার স্বজনেরা থানায় ছুটে আসেন। ঘটনার ১৪ দিন পর গত ২ জুলাই সোমবার নিহতের ভাই বাদি হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। গতকাল রোববার ভোরে জুলেখাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে গত ৬ জুলাই শুক্রবার জুলেখার স্বামী সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শনিবার তাকে আদালতে তোলা হলে অকপটে স্বাকীর করেছে কেন সেলিম ও তার স্ত্রী মিলে ঝর্ণাকে হত্যা করেছে আর কিভাবে তারা সেই হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করেছে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার ফুটপাথের ব্যবসায়ী ঝর্ণার হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া সেলিম পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, ঝর্ণা ছিল তার স্ত্রীর একজন ভালো বান্ধবী। সেই সূত্রে ঝর্ণা বেগম তাদের বাসায় যাতায়াত করত। ঝর্ণা আগে একজন দেহ ব্যবসায়ী ছিল এবং তার সর্বশেষ তৃতীয় স্বামীর সাথে সম্প্রতি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ঝর্ণার আগের দুই স্বামীর সাথে কিভাবে বিয়ে হয়েছিল এবং কিভাবে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছিল সেই গল্প না জানাতে পারলেও সেলিম নিহত ঝর্ণার তৃতীয় স্বামীর সাথে কিভাবে বিয়ে ও ছাড়াছাড়ি হলো সে কথা ঠিকই জানিয়েছে।
সেলিম জানায়, নিহত ঝর্ণা ও তার স্ত্রী কোনো এক সময় এক সাথেই দেহ ব্যবসা করত। সেই সময় ঝর্ণার বান্ধবীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল সেলিমের। সেই সূত্রে পরে ঝর্ণার বান্ধবীকে সেলিম বিয়ে করেন এবং তাকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনেন।
সেলিম আরো জানায়, সম্প্রতি ঝর্ণা তার স্ত্রীকে নানাভাবে সেই আগের দেহ ব্যবসায় নামার জন্য ফুসলানো শুরু করেছিল। বিষয়টি সেলিমের স্ত্রী যখন সেলিমকে জানায় তখন বেশ ক্ষেপে যায় এবং ঝর্ণাকে চিরতরে খতম করার পরিকল্পনা করতে শুরু করে। এরপর তার স্ত্রীকে বুঝিয়ে ঝর্ণাকে বিশ্বকাপের খেলা দেখার জন্য বাসায় আসতে বলে। ঝর্ণা বাসায় এলে তাকে রাতে দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে খোশ গল্পে মাতে তারা। একপর্যায়ে ঝর্ণা ঘুমিয়ে পড়লে স্বামী-স্ত্রী মিলে ঝর্ণাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। শেষে তারা ঝর্ণার লাশ তাদের ঘরে রেখে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। আর সে সময় বাসাটিতে কেউ ছিল না বলেও জানায় সেলিম।