স্ত্রী জুলিয়ার সাথে পরকীয়ার কারণেই মুয়াজ্জিন সোহেল রানাকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে স্বামী রাজু আহম্মেদ। বুধবার সকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাগুটিয়া গ্রাম থেকে রাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোহেল রানা কোটচাঁদপুর উপজেলার সাব্দালপুর ইউনিয়নের লক্ষীকুন্ডু গ্রামের জোয়ারদার পাড়ার বখতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার চাপালী জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন
দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, কালীগঞ্জের বলরামপুর গ্রামের হাকিম আলীর মেয়ের জুলিয়া ও কোটচাঁদপুর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের বখতিয়ার আলীর ছেলে সোহেল রানা চাপালী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো। এ সময় তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তিনি আরো বলেন, তাদের প্রেমের বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পারলে চারমাস আগে জুলিয়ার বাবা-মা তাকে সদর উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে রাজু আহম্মেদের সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের পরও জুলিয়ার সাথে সোহেলের সম্পর্ক ছিল। তারা একে অপরের সাথে মোবাইলে কথা বলতো ও দেখা করতো।
পুলিশ সুপার বলেন, এভাবেই তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক চলতে থাকে। বিষয়টি স্বামী রাজু আহম্মেদ জানতে পারে। জুলিয়া তার সাবেক প্রেমিককে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে তার স্বামী রাজুকে সাথে নিয়ে হত্যার ছক কষেন। সোমবার স্বামী রাজু আহম্মেদ স্ত্রী জুলিয়ার মাধ্যমে মোবাইলে মুয়াজ্জিন সোহেল রানাকে ডেকে আনে। প্রেমিকার ফোন পেয়ে সোহেল দেখা করতে আসলে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রাজু ও তার ২ জন সহযোগী তাকে ধরে নিয়ে মাঠের পাট ক্ষেতে পুরুষাঙ্গ কেটে ও গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার সকালে পাটক্ষেতে লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দিলে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রিংকু হোসেন বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কনক কুমার দাস ও সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান খান অভিযান চালিয়ে নিহত সোহেল রানার প্রেমিকা জুলিয়া খাতুনকে আটক করে। সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পরে বুধবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজু আহম্মেদকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও নিহত সোহেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান।
চাপালী মসজিদের ইমাম আবু হাসান বলেন, মোয়াজ্জিন হিসেবে সোহেল রানা দীর্ঘদিন চাপালী মসজিদে কর্মরত ছিলেন। মসজিদের সঙ্গে থাকা কক্ষে তিনি রাত্রিযাপন করতেন। সোমবার সোমবার বিকেলে তিনি পাইকপাড়া মাদ্রাসায় দাওয়াত আছে বলে ছুটি চান। এরপর তিনি চলে যান। কিন্তু রাতে আর ফিরে আসেননি। মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ানোর সময় তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরে খবর আসে যে বাগুটিয়া গ্রামের মাঠে তার লাশ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান খান জানান, নারীঘটিত কারণে সোহেল রানাকে হত্যা করা হয়েছে। বিয়ের আগে থেকেই জুলিয়া খাতুনের সাথে নিহত সোহেল রানার দৈহিক সম্পর্ক ছিল। জুলিয়ার বিয়ে হলেও পিছু ছাড়েননি তিনি। ওই এলাকায় মাঝে মাঝে থাকতেন। এ নিয়ে জুলিয়া আদালতে ৬ পাতার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে হত্যার পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন তিনি।