স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জনসংখ্যা রোধে সর্বোচ্চ দুই সন্তান গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ণের পরিকল্পনা বর্তমান সরকারের নেই। তবে, দেশের জনসংখ্যা সীমিত রাখার জন্য এবং পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সর্বোচ্চ দুই সন্তান গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত মোঃ মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকারের সভাপতিত্বে বিকালে এ অধিবেশন শুরু হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিত পরিবার গঠন, জন্মবিরতিকরণ, মা-শিশু স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব, বাল্যবিবাহ রিরোধ, পুষ্টি, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্ধুদ্ধ করার জন্য দেশব্যাপী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫০টি ক্যাম্পেইন, ৫হাজার টেলিভিশন চ্যানেল ও ৬ হাজার রেডিও বার্তা প্রচার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনামূলক ১৪০টি কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। জনগণের দৌরগড়ায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও বার্তা পৌছে দিতে সারাদেশে প্রতিমাসে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিকের আয়োজন করা হচ্ছে এবং মাঠ পর্যায়ে ৪৫ হাজার পরিকার কল্যাণ সহকারী প্রত্যেকে প্রতি মাসে একটি করে উঠান বৈঠক আয়োজন করে ছোট পরিবার গঠনে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে।
১৯৭০-৭৫ সাল পর্যন্ত প্রজনন হার ছিল ৬.৯১ যা বর্তমানে ২.০৫ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালে পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহারের হার ছিল ৭.৭শতাংশ যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২.৪ শতাংশ। ২০২২ সালের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৭৫ শতাংশ উন্নীত হবে। এতে মোট প্রজনের হার ২ শতাংশ নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ডায়াগনসিসের ৪০ ভাগ কমিশন চিৎিসক নেন, এটা কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে এ ধরণের ঘটনা হতে পারে। তবে, সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা শাস্ত্রে দেশের মেডিকেল কলেজসমূহে পাঠদানের জন্য শিক্ষক স্বল্পতা নিরসনে সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও লেকচারার পদে অনুমোদিত ৩৮২৯টি পদের বিপরীতে শূন্যপদ রয়েছে ১৭৭২টি, যার নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
আবুল কালাম মোঃ আহসানুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে বর্তমানে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১১২টির মধ্যে সরকারি ৩৬টি, বেসরকারি ৭০টি ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ০৬টি। সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে আসন সংখ্যা ৪০৬৮টি, বেসরকারিতে ৬২৩১টি এবং সেনাবাহিনীতে ৩৭৫টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ জেলায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আগামীতে ভৌগলিক অবস্থান, জনসংখ্যার পরিমাণ ও প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ে জরিপ করে প্রয়োজনীয় মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অসহায় ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়ে থাকে।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে এ, বি ও সি গ্রেডের ফার্মাসিষ্টের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। তবে, এ গ্রেডের ১৫০২১টি, বি গ্রেডের ১৬৪৮৯টি ও সি গ্রেডের ১০৭৪০০জন রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট রয়েছে। তবে, ১৩টি পাবলিক ও ২৮টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ চালু রয়েছে। এখান আগামীতে এ গ্রেডের ফার্মসিষ্ট পাওয়া যাবে।
মোঃ হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, গ্রামীণ জনপদে পল্লী ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিমিত্তে সরকারি ব্যয়ে ডাক্তারদের বিদেশ পাঠাইবার বিধান আছে। ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের পরিকল্পনা আছে।
মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তারের অবহেলায় রোগী মৃত্যু হচ্ছে বিষয়টি সঠিক নয়। মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কালিন সকল চিকিৎসা নিশ্চিত করা সত্ত্বেও রোগী মৃত্যুবরণ করতে পারে।