গতকাল বুধবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে খুন হন রিফাত নামের এক যুবক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সেই খুনের ভিডিও অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, স্বামীকে বাঁচাতে প্রাণপনে লড়ে যাচ্ছেন স্ত্রী। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) ফেসবুকে আরেকটি স্থিরচিত্র ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, রিফাতের খুনী নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী দাঁড়ালো। তার হাতে ফুল, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য আরেকজন যুবক রিফাতের স্ত্রীকে মিস্টি খাইয়ে দিচ্ছে।
প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যাকরীদের মধ্যে অন্যতম একজন রিফাত ফরাজী (২৫)। বরগুনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি রোডের মো. দুলাল ফরাজীর বড় ছেলে তিনি।
নিহত রিফাতের পরিবার জানায়, স্ত্রীর সামনে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশ লাইন্স সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি নামের এক মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন নামে এক যুবক মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে। সেই সঙ্গে রিফাতের স্ত্রীর সঙ্গে নয়নের পরকীয়া সম্পর্ক আছে বলেও দাবি করে নয়ন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার নয়নকে নিষেধ করে রিফাত। এরপরও শোনেনি নয়ন। এক পর্যায়ে প্রতিবাদ করে রিফাত। সেই জেরেই তাকে খুন করা হয়।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।
নিহত রিফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, পরকীয়ার জেরে একবার রিফাত শরীফকে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েছিল নয়ন বন্ড। মঞ্জুরুল আলম জন আরও বলেন, বুধবার সকালে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়নসহ কয়েকজন রিফাতের ওপর হামলা চালায়।
তখন ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাতকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে নয়ন ও তার সহযোগীরা। রিফাতের স্ত্রী মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বলেন, বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়কের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন বন্ড ও তার প্রতিবেশী দুলাল ফরাজীর দুই ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী এবং রাব্বি আকন আমার স্বামীর ওপর হামলা চালায়। আমার সামনে ওই সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমি শত চেষ্টা করেও আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার করবে পুলিশ।