বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রী আয়েশার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেছেন, ‘দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিলেন তারা মনে হয় না সাধারণ পথচারী বা ছাত্র। অবশ্যই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬ ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘এমডি শাহরিয়ার আলম এমপি’ নামে তার ভেরিফাইড ফেসবুকে ট্যাগ করা ‘মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম’ ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, বরগুনার হত্যার গ্রেফতার এবং বিচার হবে, হতেই হবে। ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেয়া হয়েছে বলে সবাই এটা নিয়ে কথা বলছেন। অবশ্যই ভালো।
তিনি লিখেছেন, কিন্তু অন্য সবকিছু বাদ দিলাম। গতকাল মোটামুটি একই সময়ে রাজশাহীর তানোরে বাজারে আম বিক্রি করতে গিয়ে একই ভাবে নিহত হয়েছে আর একজন তরুণ, প্রকাশ্যেই দিবালোকেই হত্যা করেছে পাশের আর এক দোকানদারের ছেলে। নিহতের একটা রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে, সে সেখানকার একটি ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। না কোন টেন্ডার নিয়ে বা বান্ধবী নিয়ে ফেসাদ নয়। সংসার চালাতে নিজেই বাগানের আম বিক্রি করতে গিয়েছিলো সেই হতভাগা তরুণ।
প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, সব মৃত্যুই আমাকে নাড়া দেয়। তরুণ - তরুণীর মৃত্যু একটু বেশী নাড়া দেয়। শিশুর মৃত্যু আরও বেশী নাড়া দেয়।
তিনি লিখেছেন, আমরা বরগুনার মত সবগুলোর ভিডিও দেখতে পাই না। গতকাল হয়তো এই দুইয়ের বাইরেও মানুষ খুন হয়েছে বা অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা সবগুলোর খোঁজ রাখি না। তবে সচেতনতা সামাজিক সমস্যাগুলোকে কমিয়ে আনবে।
তিনি দাবি করেছেন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিলেন তারা মনে হয় না সাধারণ পথচারী বা ছাত্র। অবশ্যই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা নিশ্চিত করবো প্রথমে গ্রেফতার তারপর ন্যায় বিচার। এব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে দিনদুপুরে স্ত্রী আয়েশার সামনে রিফাত শরীফ (২৫) কে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা।
গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।
এদিকে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো দা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনাটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে যে দুই যুবককে দেখা যায় তাদের একজনের নাম নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। তারা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এসব ঘটনায় তারা একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
এদিকে রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম বলেন, রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। আয়েশার বিয়ে নিয়ে নয়নের সঙ্গে রিফাতের দ্বন্দ্ব চলছিল। এ কারণে রিফাত প্রতিদিন আয়েশাকে কলেজে পৌঁছে দিতেন। স্ত্রীকে কলেজে দিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হন রিফাত।
রিফাতের কয়েকজন বন্ধু জানান, নয়নের নেতৃত্বে রিফাত ফরাজিসহ আরও দুই যুবক ওই হামলায় অংশ নেন। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাতের বুকে, ঘাড়ে, পিঠে আঘাত করেন।
এ বিষয়ে বরগুনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানে থানা পুলিশের সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযান চলছে, শিগগিরই খুনিদের গ্রেফতার করা হবে।