বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। রিফাতের পারিবারিক কয়েকটি সূত্র বলছে রিফাতের স্ত্রী মিন্নিই এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। এর পক্ষে জোরালো কিছু যুক্তি দেখাচ্ছেন তারা। নিহত রিফাতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বায়জিদ সামাজিক যোগাযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য এখানে হুবহু সেটি তুলে ধরা হলো।
‘রিফাত শরীফের হত্যার ভিডিওটা তে দেশবাসি যা দেখছে সেটাতে রিফাত ভাইয়ে বউ মীন্নি নির্দোষ। কিন্তু ভেতরের খবরটা সবারি অজানা! এই মিন্নি গত ২৬-০৬-১৯ খ্রিঃ সকাল ১০.০০ ঘটিকার সময় রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজে সাথে করে নিয়ে যায়। এবং খুনি নয়নের সাথে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে নিজের স্বামীকে হত্যা করে। প্রথমে কলেজের ভিতরে বসে রিফাত শরীফকে ১. নয়ন, ২. রিফাত ফরাজি ৩. রিশাদ ফরাজি ও অন্যান্য সহযোগীরা লাঠি ও চটপটি ভ্যানের লম্বা চামিচ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধোর করে। তখন মিন্নী দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখতেছিল। মারামারি এক পর্যায় মারতে মারতে রিফাত শরীফকে কলেজ গেটের সামনে নিয়ে যায়। এবং চলন্ত রাস্তার মধ্যে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তখন মিন্নী স্বামীকে বাচানোর যে নাটক টা করেছে সেটার কারনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজটির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পাব্লিসিটি পেয়ে যায়। কিন্তু পাবলিসিটি দেয়া মানুষ গুলো জানেনা এই মিন্নী খুনি নয়নের সাথে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। আচ্ছা আপনারা কি খেয়াল করেছেন চাপাতি দিয়ে কোপানোর সময় মিন্নীকে একটা আঘাতও করেনি সন্ত্রাসীরা? কারন এই নয়নের সাথে মিন্নী পরকীয়াতে লিপ্ত ছিল এবং দুজনে এক সাথে ইয়াবা সেবন করত। বলে রাখা ভাল নয়ন বরগুনা জেলার মাদক সিন্ডিকেটর মূল নায়ক যার নামে বরগুনা সদর থানায় কমপক্ষে ২০টা মামলা আছে! কলেজের ভেতরে মারামারি হওয়া আগ মূহুর্তে রিফাত শরীফ মিন্নীকে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে চাইলে মিন্নী বিভিন্ন বাহানায় রিফাত শরীফ কে আটকে রেখেছিল। রিফাত ভাই ঐ সময় যদি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করত তাহলে হয় তো বেচে যেত। হায়রে ভালবাসার মেয়েটা কে ভাই ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। রাস্তার মধ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দা, চাপাতির যন্ত্রণা সহ্য করেছে। শেষে রক্তাক্ত রিফাত ঘাড় হইতে গলা পর্যন্ত গুরুতর জখম নিয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে যায় এবং মিন্নী বরগুনা সদর হাসপাতা থেকে বাড়ি চলে যায়। পরে রিফাত শরীফকে নিয়ে বড় ভাইয়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে পৌছাবার আগে কান্না ভাঙ্গা গলায় আমাকে ফোন দিয়ে বলে, "ভাই তুই কই জলদি হাসপাতালে যা আমি রিফাত কে নিয়া চলে আসছি।" গত ২৬-০৬-১৯ তারিখে শের-ই-বাংলা মেডিকেল থেকে ময়নাতদন্তের শেষ অবদি রিফাত ভাইয়ের লাশের সাথে ছিলাম। কিন্তু ঐ মানুষ রুপি ডাইনির বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কোন দেখা পাইনি। সে বাড়িতে বসে মিডিয়ায় বাইট দিছে আর বলছে, "আমি আমার স্বামীকে বাচাতে পারিনি।" কুত্তার বাচ্চার চোখ দিয়ে একফোটা পানিও পরেনি যে মানুষটা নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে চলে গেল তার জন্য। একটা মেয়ের কারনে এক নিষ্পাপ ছেলের প্রান গেল। অনেক কষ্টে ০৫ ব্যাগ A+ রক্ত ম্যানেজ করেছিলাম কিন্তু ০১ ব্যাগের বেশি লাগেনি বাকি রক্ত গুলো দেয়ার আগেই ভাইটা মারা গেলে। অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে হাসপাতালের কেরিং বেডে শোয়ানো অবস্থায় রিফত ভাই চোখ দুটো দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কোন পলক দিচ্ছিলনা। রক্তে সার্ট-প্যান্ট ভিজে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল এইমাত্র রক্তের পুকুরে ঢুব দিয়ে এসেছে। স্যালাইন এবং রক্ত চলাকালিন ভাই বারবার ডান হাত আর ডান পা জোড়ে জোড়ে খিচুনি দিচ্ছিল আমি ঐ ডান হাত আর পা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর পুরনো দিনের কথা গুলো ভাবছিলাম। রাতে বাসা থেকে রাগকরে এসে আমার নাম ধরে ঢাকত। দরজা খুলে দিলে বলত, "চলে আসছি থাকব না তোর চাচার বাড়ি।" রিফাত ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হয়েছিল ঈদের দিন। পেছন থেকে রিফাত ভাই ডেকে বলছিল, "শোন তোর সাথে কথা আছে।" আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, "কি কথা ভাই?" কি যেন ভেবে বলেছিল, "থাক পরে বলবনে।" যদি জানতাম ঐ কথা টুকুই হবে শেষ কথা তাহলে মনের সব কথা বলে রাখতাম। আমার ভাইটা দিনেদুপুরে খুন হয়ে গেল কেউ কিচ্ছু বললো না। একটা ডাইনীর চক্রান্তে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ভাই আমার না ফেরার দেশে চলে গেল। অপারেশন থিয়েটারে বসে ঘাড়ে অবস্থিত ব্রেনে ব্লাড সার্কুলেশন কারি ভেইন দুটো জোড়া লাগনো সম্ভব না হলে তাৎক্ষণাত মৃত্যু হয়। পরে আইসিইউতে দিলে হার্টবিট মনিটরে দেখলাম পালসের রেখাটা নিথর হয়ে সোজাসুজি বাম দিক থেকে ডান দিকে চলে যাচ্ছে। এই দুই হাতে রিফাত ভাইয়ের কফিনে বরফ দিয়েছি কফিন কাঁধে নিয়েছি এইটাই যদি শেষ পরিনতি হবে জানলে ঐদিন ভাইকে আর যেতে দিতাম না। ভাইয়ে রক্তের দাগ জিন্স প্যান্টে নিয়ে বেচে আছি শুধু ন্যাজ বিচারের আশায়। আমার ভাইয়ের হত্যার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই। খুনি মিন্নী ও খুনি নয়নের ফাসি চাই।’
নিহত রিফাতের চাচাতো ভাই হিসেবে দাবি করা মোহাম্মদ বায়জিদের অভিযোগগুলো কতটুকু সত্য সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু বরগুনাজুড়ে রিফাত হত্যার সঙ্গে স্ত্রী মিন্নির সংশ্লিষ্টতা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।