সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছিল প্যারাগুয়ের পক্ষে। বিশেষ করে ম্যাচ যখন গড়ালো টাইব্রেকারে, তখন ব্রাজিলের সমর্থকদের মনে যেনো উঁকি দিচ্ছিলো ২০১১ ও ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকার কথা। তবে সেসবকে পাত্তা দেননি গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী অ্যালিসন বেকার।
ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষেও গোল করতে পারেনি কোনো দল। ফলে ম্যাচের নিষ্পত্তি করতে টাইব্রেকারের আশ্রয় নিতে হয়। যেখানে গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারের বীরত্বে প্যারাগুয়েকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল।
টাইব্রেকারের প্রথম শটটি নেয় প্যারাগুয়ে। গুস্তাভো গোমেজের ডানদিকে নেয়া শটটি দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন অ্যালিসন। ফলে শুরুতেই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যায় ব্রাজিল। পরে নিজেদের প্রথম শটে গোল করেন উইলিয়ান।
তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শটে গোল করে দুই দলই। চতুর্থ শটে গিয়ে ভুল করে বসেন ব্রাজিলের রবার্তো ফিরমিনো। সমতা চলে আসে টাইব্রেকারে। কিন্তু সে সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি প্যারাগুয়ে। উল্টো পঞ্চম শট মিস করে ব্রাজিলের হাতে ম্যাচটি তুলে দেয় তারা। নিজেদের শেষ শটে গোল করে ব্রাজিলের জয় নিশ্চিত করেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস।
এ জয়ে একরকমের প্রতিশোধও নেয়া হলো ব্রাজিলের। কারণ ২০১৬ সালের ভরাডুবিময় আসর বাদ দিয়ে ২০১১ এবং ২০১৫ সালের আসরে প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরেই কোপা আমেরিকা থেকে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। এবার সেই টাইব্রেকারেই প্যারাগুয়েকে বিদায় করে দিল তারা।
গ্রেমিও এরেনায় ম্যাচের প্রথমার্ধে প্যারাগুয়ের রক্ষণের ওপর বেশ চাপ প্রয়োগ করেই খেলতে থাকে ব্রাজিল। মাত্র তৃতীয় মিনিটেই রবার্তো ফিরমিনো পেয়ে যান গোলের সুযোগ। কিন্তু পেনাল্টি এরিয়া থেকে সেটিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ফিরমিনো।
শুরুর এ ধার পুরো ৪৫ মিনিটই ধরে রাখে ব্রাজিল। কিন্তু কাজের কাজ গোলটি তারা করতে পারেনি। তবে কম যায়নি প্যারাগুয়েও। ম্যাচের ২৯তম মিনিটে পেরেজের কাছ থেকে বল পেয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে শট নেন গঞ্জালেজ। এলিসন বেকারের দুর্দান্ত সেভে সে যাত্রায় বেঁচে যায় ব্রাজিল।
প্রথম ৪৫ মিনিটের শেষদিকে রেফারি যেনো কার্ড-কার্ড খেলায় মেতে ওঠেন। দশ মিনিটের ব্যবধানে তিনি হলুদ কার্ড দেখান ৪ খেলোয়াড়কে। প্যারাগুয়ের সান্তিয়াগো আরজামেন্দিয়া দুয়ার্তে, ইভান পিরিস ও জুনিয়র আলোনসো এবং ব্রাজিলের ফিলিপ্পে লুইস দেখেন হলুদ কার্ড।
গোলশূন্য ব্যবধানেই শেষ হয় প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখা লুইসকে বসিয়ে অ্যালেক্স সান্দ্রোকে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। কিন্তু এর খানিক পরই হলুদ কার্ড দেখেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ফিরমিনো। তবে খানিক পরে এই ফিরমিনোর কল্যাণেই লিডের আশা জাগায় ব্রাজিল।
ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে ফিরমিনোকে ডি-বক্সের কাছে পেছন থেকে বাঁধা দেয়ায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি এবং হলুদ কার্ড দেখান ফাউলকারি ফাবিয়ান বালবুয়েনাকে। তবে প্যারাগুয়ের খেলোয়াড়দের প্রবল দাবির মুখে ভিএআরের সহায়তা নিতে বাধ্য হন রেফারি।
প্রায় ৩-৪ মিনিট ধরে দেখা ভিএআরের পর সিদ্ধান্তে বদল আনতে বাধ্য হন রেফারি। এবার তিনি পেনাল্টিকে দেন ফ্রিকিক, বক্সের ঠিক বাইরে। তবে বালবুয়েনার হলুদ কার্ডটিকে পরিণত করেন লালে। ফলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ১০ জনের দলে পরিণত হয় প্যারাগুয়ে।
এদিকে পেনাল্টি থেকে বদলে যাওয়া ফ্রিকিকটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। তবে এতে প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক রবার্তো ফার্নান্দেজের কৃতিত্বই বেশি। তিনি ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন দানি আলভেসের নিচু করে নেয়া ফ্রিকিকটি।
গোল না পেলেও প্যারাগুয়ের রক্ষণে চাপ অব্যাহত রাখে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের জালে আক্রমণ করার একদমই সুযোগ পায়নি প্যারাগুয়ের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা। উল্টো তাদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়েছে ব্রাজিলের আক্রমণ সামাল দিতেই। দলের কোচ একাধিক খেলোয়াড় পরিবর্তন করে রক্ষণের শক্তি বাড়ান।
ম্যাচের ৬৯ মিনিটে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে জোরালো শট নেন আর্থুর। তবে সেটিকে জালে প্রবেশ করতে দেননি প্যারাগুয়ের গোলরক্ষক ফার্নান্দেজ। মিনিট পাঁচেক পরেই সত্যিকারের সুযোগ পায় ব্রাজিল। ডি-বক্সের মধ্যে জটলা থেকে ফাঁকায় বল পান গ্যাব্রিয়েল হেসুস। কিন্তু মাত্র ৮ গজ দূর থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন এ ফরোয়ার্ড। ফলে সে যাত্রায়ও গোল পাওয়া হয়নি ব্রাজিলের।
শেষের ১০ মিনিটে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। অ্যালানের বদলে উইলিয়ান এবং দানি আলভেসের বদলে লুকাস পাকুয়েতাকে মাঠে নামান তিতে। এরই মাঝে ৮৫তম মিনিটে ম্যাচের তৃতীয় ব্রাজিলিয়ান হিসেবে হলুদ কার্ড দেখেন আর্থুর মেলো।
সে ফাউলের কারণে ফ্রিকিক পায় প্যারাগুয়ে। যার ফলে দ্বিতীয়ার্দ্ধে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলের রক্ষণে যাওয়ার সুযোগ পায় তারা। কিন্তু সেটিকে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। শেষের পাঁচ মিনিট আক্রমণ বহাল রাখে ব্রাজিল।
৮৮ মিনিটের মাথায় ফিলিপ্পে কৌতিনহোর মাপা ফ্রিকিকে দুর্দান্ত এক হেড করেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। কিন্তু প্যারাগুয়ের গোলরক্ষকের ক্ষিপ্রতায় আবারও হতাশ হতে হয় ব্রাজিলিয়ানদের। মিনিটদুয়েক বাদে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বা পায়ের শট নেন উইলিয়ান, যা পরাস্ত করে গোলরক্ষককেও। কিন্তু বাঁধা পড়ে বারপোস্টে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে ইনজুরি টাইম যোগ করা হয় আরও ৭ মিনিট। যাতে বেশ কয়েকটি জোরালো আক্রমণ করেও গোল আদায় করতে পারেনি ব্রাজিল। ফলে টাইব্রেকারে যাওয়ার বাঁশি বাজান রেফারি।