বরিশালের মুলাদী উপজেলার রাঘুয়া কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিনদিন ধরে বন্ধ। কারণ কি? তা হলো সাপের ভয়। সাপ আতঙ্কে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হচ্ছে না। কোনো উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবেই বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনদিনে রাঘুয়া কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অন্তত প্রায় ৬০টি সাপ মেরেছে এলাকাবাসী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী তাদের শ্রেণি কক্ষে একটি সাপ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এতে ওই কক্ষে থাকা সব শিক্ষার্থী আতঙ্কিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। শিক্ষকরা ওই সাপটি মেরে ফেলার পর পরই শ্রেণিকক্ষের ভাঙা মেঝের গর্ত থেকে একাধিক সাপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এতে আতঙ্কিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ি চলে যায়।
পরে গত শনিবার সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা এসে কেচি গেটে পেঁচানো অবস্থায় একটি সাপ দেখতে পায়। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের মেঝের কিছু অংশ ভেঙে ফেললে বেশ অনেকগুলো সাপ বেরিয়ে আসে। এ সময় সাপের অগণিত ডিম ও বাচ্চাও দেখতে পাওয়া যায়। ওই দিন ১৭টি সাপ মারা হয়।
রোববার (৩০ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যালয়টির বিভিন্ন কক্ষ থেকে অন্তত ৪২টি সাপ মেরেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, মাঝে মধ্যেই বিদ্যালয় ও এর আশপাশে সাপ দেখা যেত। ভবনের ভাঙা অংশে আরও অনেক বিষধর সাপ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া স্কুলের আশপাশেও অনেক সাপ রয়েছে। সাপ বেরিয়ে আসায় সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার চতুর্থ শ্রেণিতে পাঠদান চলার সময় মেঝের ভাঙা অংশ দিয়ে একটি সাপ বেরিয়ে আসে। আতঙ্কে ছাত্রছাত্রীরা ও শিক্ষকরা দৌড়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এ ঘটনায় সব ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয় ভবন ছেড়ে দূরে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, পরে শিক্ষকরা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সাপটি মেরে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পর অগণিত ডিম ও বাচ্চাসহ বেশ কয়েকটি সাপ দেখতে পাওয়া যায়। তিনদিনে অন্তত ৬০টি সাপ মারা হয়েছে। এরপরও সাপের উপদ্রব কমছে না। সাপের ভয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। সাপ আতঙ্কে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সাপ আতঙ্কের বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, রাঘুয়া কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ আতঙ্কের বিষয়টি শুনেছি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে আরও দু-তিনদিন বিদ্যালয়টি বন্ধ রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া দ্রুত বিদ্যালয়ের মেঝে ভেঙে বালু ভরাট করে পুনরায় নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস ও কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদকে অনুরোধ করা হয়েছে।