বিশ্বে এক থেকে দেড় কোটি মানুষের নাগরিকত্ব নেই, তারা দেশহীন। তারা বঞ্চিত নাগরিকত্বের মত মৌলিক অধিকার থেকে। দে থেকে দেশান্তরে নানা অবহেলার মধ্যে কোনোমতে বেঁচে আছে। যদিও জাতিসংঘের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য দেশ’ প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য সমনে নিয়েই পূরণ বুধবার নেদারল্যান্ডেসের হেগে অনুষ্ঠিত হয় এক সম্মেলন। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক এসব ঠিকানাহীন মানুষদের কে কেথায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ ১৯৮২ সালে বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাশ হয়। আর তাতেই নাগরিকত্ব হারায় মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় মানবিক বাংলাদেশ। জনসংখ্যার চাপে থাকা ছোট্ট এ দেশটিতে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
আইভরি কোস্ট ছয় লাখ ৯২ হাজার ঠিকানাবিহীন মানুষকে ঠাঁই দিয়েছে আইভরি কোস্ট। বুরকিনা ফাসো, মালি, ঘানা থেকে এই মানুষগুলো এসেছে আইভরি কোস্টে। দেশটির কফি এবং তুলা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে কোনোরকম দিন যাপন করছে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষ। দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি নাগরিক, যারা এখনও বাস্তুচ্যুত।
থাইল্যান্ড চার লাখ ৭৯ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষের বসতি থাইল্যান্ডে। পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী ইয়াও, হ্যামং এবং কারেন সম্প্রদায়ের মানুষ এরা। মিয়ানমার এবং লাওস সীমান্তবর্তী পর্বত এলাকায় তাদের অস্থায়ী আবাস৷
ইস্তোনিয়া-লাটভিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বাল্টিক রাষ্ট্র গঠন হলে, কপাল পোড়ে অন্তত দুই লাখেরও বেশি মানুষের।কারণ তাদের আর কোনো ঠিকানা নেই, কোনো বসতি নেই। তাদের দুই লাখ ২৫ হাজার আছেন লাটভিয়াতে আর ৭৮ হাজার আছেন ইস্তোনিয়ায়।
সিরিয়া ১৯৬২ সালের কথা৷ আরবকরণের প্রক্রিয়ায় বলি হয়ে, নাগরিকত্ব হারান কুর্দরা৷ গৃহযুদ্ধের আগে অন্তত তিন লাখ কুর্দ হয়ে পড়ে দেশহীন। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এখনও সিরিয়ায় নাগরিকসুবিধা বঞ্চিত হয়ে বাস করছে ১ লাখ ৬০ হাজার কুর্দ। এদের অনেকে আবার অন্যান্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
কুয়েত ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা এলেও নাগরিক স্বীকৃতি জোটেনি যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত বেদুঈনদের। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ৯২ হাজার বেদুঈন আছে কুয়েতে; যারা বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরির মতো নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত।
ডমিনিকান রিপাবলিক অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে, ২০১৩ সালে জাতীয়তা বিষয়ক আইনে পরিবর্তন আনার পর, আদালত থেকে রুল জারি করা হয়। আর তাতেই অনেকেই হয়ে যান দেশহীন। এমনকি, হাইতি থেকে আসা অনেক মানুষ ডমিনিকে জন্ম নিলেও মেলেনি নাগরিকত্ব। জাতিসংঘের ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী এখানে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার।
ইরাক নাগরিক সুযোগ বঞ্চিত সাড়ে ৪৭ হাজার মানুষের আবাস ইরাকে। এদের মধ্যে আছেন, ঐতিহাসিকভাবে ইরাক-ইরান সীমান্তে বসবাসকারী কুর্দ, ফিলিস্তিনের শরণার্থী আর বেদুঈনরা।
ইউরোপ ভারতীয় বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রোমা। এই সম্প্রদায়ের হাজার দশেক মানুষের বাস, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে।তারাও আছেন নাগরিকত্ব সংকটে থাকাদের দলে। চেকোশ্লাভাকিয়া ও যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে গেলে, তাদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় নতুন রাষ্ট্র। কসভো আর বসনিয়ায় ঠাঁই নেয়া রোমারাও যুদ্ধের কারণে পরিচয় সংকটে পড়ে যান। এখনও কোন স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পায়নি এসব মানুষ।
কলম্বিয়া ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে অনেক মানুষ পাড়ি জমান কলম্বিয়ায়। যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে অন্তত ২৫ হাজার শিশু। তারাও আছে পরিচয় সংকটে। কারণ, কলম্বিয়ার নাগরিকত্ব পেতে বাবা-মায়ের মধ্যে একজনের সে দেশের নাগরিকত্ব থাকতে হয়, যা তাদের নেই।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে