হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ, যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প-গুজব রয়েছে। এরশাদ তার জীবনী গ্রন্থ ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ এ তিন ছেলে এক মেয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এরশাদ তাঁর জম্ম, বেড়ে ওঠা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণসহ জীবন ও কর্ম নিয়ে আত্মজীবনীমূলক এই বইটি প্রকাশ করেন। রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ৮৬৩ পৃষ্ঠার এ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।
‘আমার কর্ম আমার জীবন’ নামে এরশাদের এই আত্মজীবনী প্রকাশ করেন বিনিময় প্রিন্টার্স। এ বইটি এরশাদ তাঁর বাবা ও মায়ের নামে উৎসর্গ করেন। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন এরশাদের সময়কার মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী। বইয়ের ওপর আলোচনা করেন সাবেক সচিব মোকাম্মেল হক, শিশু সাহিত্যিক ও ছড়াকার রফিকুজ্জামান এবং কবি ও লেখক মফিজুল ইসলাম।
ওই বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সব চেয়ে বড় মেয়ে মাহজাবিন (জেবিন)। দেশে লেখাপড়ার পর লন্ডনে গিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। বিয়ে করে বর্তমানে লন্ডনেই অবস্থান করছেন তিনি। মেয়ে সাবিতা ও ছেলে নিকো জলিকে নিয়ে জেবিনের ছোট্ট সংসার। তবে জেবিনের মায়ের নাম উল্লেখ করেননি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। আর এরশাদের ছেলেদের মধ্যে সবার বড় রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। জন্ম হয় ১৯৮৩ সালে। সাদ প্রথমে আমেরিকান স্কুলে লেখাপড়া করেন। গ্রাজুয়েশন শেষে মালয়েশিয়ায় গিয়ে ব্যবসা করছেন।
১৯৯০ সালে এরশাদের সঙ্গে জেবিন ও সাদকেও আটক করা হয়েছিল। আড়াই বছর পর হাজত থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তারা। গ্রন্থে আলম নামে আরেক পুত্রের নাম উল্লেখ করেছেন এরশাদ। আলম সম্পর্কে বলেছেন, ‘সে আমার ঠিক ঔরসজাত সন্তান নয়, তবে তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।’
এরিক হচ্ছেন এরশাদের কনিষ্ঠ সন্তান। বিদিশার গর্ভে তার জন্ম হয়েছে ২০০১ সালের ১১ মার্চ। বিদিশা-এরশাদের বিচ্ছেদ হলে এরিক বিদিশার কাছেই বেড়ে ওঠেন। এরিক সম্পর্কে জীবনী গ্রন্থে এরশাদ লিখেছেন, ‘স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি সঙ্গীতকে বেছে নিয়েছেন জীবনের অন্যতম সঙ্গী হিসেবে। আধুনিক, রবীন্দ্র, নজরুল সবই প্রিয়। মান্নাদের গান গাইতে খুব পছন্দ করে। মা ছাড়া একজন সন্তানকে মানুষ করে তোলা কষ্টের তা আমি তাকে দিয়েই উপলব্ধি করেছি।
দিনে-রাতে বেশিরভাগ সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ও আমার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ধর্ম-কর্মও ও মোটেই অবহেলা করে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।’ এরশাদ তার ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি জমি অনেক আগেই এতিমদের নামে লিখে দিয়েছেন। অবশিষ্ট সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে লিখে দিয়েছেন। যে ট্রাস্ট থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এরিকের ভরণপোষণ করা হবে। এরপর অবশিষ্ট অর্থ সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। এরিকের পরবর্তী প্রজন্মও একইভাবে সুবিধা ভোগ করবেন।
এ ট্রাস্টের নামে রয়েছে ১৫ কোটি টাকার এফডিআর, রংপুরের পদাগঞ্জে অবস্থিত পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজ, বারিধারার ফ্ল্যাট (প্রেসিডেন্ট পার্ক, যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন), গুলশানের ফ্ল্যাট, বনানী বিদ্যানিকেতনের বিপরীতে অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট, বনানী ইউআই শপিং কমপ্লেক্সের দু’টি দোকান, রংপুর শহরে ৬৫ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাসভবন (পল্লীনিবাস) ও নিজের নামে কেনা পাঁচটি গাড়ি। জীবনীতে তিন ছেলে এক মেয়ে উল্লেখ করলেও তাদের কোনো শর্ত রাখা হয়নি ট্রাস্টে। এ বিষয়ে এরশাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ওই ছেলে মেয়েদের তিনি প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। আর সাধের মা রওশন এরশাদের রয়েছে অঢেল সম্পদ। যা তিনি উত্তরাধীকার সূত্রেই পাবেন। একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় এরশাদের তুলনায় রওশনের সম্পদ বেশি দেখা গেছে।
সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন একসময় বেশ ক্ষমতাধর ও প্রতাপশালী ব্যক্তি। বাংলাদেশের মানুষের মনে বেশ কিছু কারণে তিনি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রয়ারি রংপুর জেলায় দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর জেলায় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে পাঁছ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০ – ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯ – ১৯৭০ সালে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক ও ১৯৭১ – ১৯৭২ সালে ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তিনি পাকিস্তান চলে যান।
পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাঙালিরা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে আসে তখন তিনিও প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সময় আগ্রা ক্যান্টনমেন্টে স্টাফ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুটান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুন মাসে সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালের ২৪ অগাস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও উপসেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৫ অগাস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরশাদ বাংলাদেশের দিল্লি মিশনের মাধ্যমে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে বার্তা পাঠান।
৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যদিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। সাধারণ নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচন সকল দল বয়কট করে। এরশাদের স্বৈরাচারের বিরূদ্ধে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সকল বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন , ১৯৮৬ (অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ১৫ অক্টোবর,১৯৮৬) জয়লাভ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এ নির্বাচনে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর আবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন। এরশাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অবিরাম আন্দোলন চলতে থাকে এবং প্রবল গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। বিএনপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে এবং কোনো কোনোটিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯৯৬-এর সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে আদালতের রায়ে দন্ডিত হওয়ার কারণে সংসদে তাঁর আসন বাতিল হয়ে যায়।
দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও সংস্কারেও এরশাদ সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়। মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করার মাধ্যমে দেশে জেলার সংখ্যা ৬৪ করা হয়। এগুলোর অধীনে আবার ন্যস্ত করা হয় ৪৬০টি উপজেলাকে। একটি সমন্বিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে প্রায়োগিক পার্থক্যের ভিত্তিতে এরশাদ সরকার ৩০টি ক্যাডারে বিভক্ত করে; সিভিল সার্ভিস ক্যাডারসমূহের গঠন ও দায়িত্ব অনুযায়ী তাদের আনুষ্ঠানিক আকার দেওয়ার লক্ষে ক্যাডার কম্পোজিশন ও নিয়োগ বিধি জারি করা হয়। পাশাপাশি এদের একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য প্রণীত হয় সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধি এবং শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি। নারীসমাজের আর্থ-সামাজিক স্বার্থ সমুন্নত রাখতে এরশাদ সরকার ১৯৮৪ সালে একটি পৃথক মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন করে।
এরশাদ আমলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল পুলিশসহ বিভিন্ন সিভিল পদে মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ। তবে প্রশাসনের আকার কমাতে তিনি বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় দফতর বিলোপ করেন এবং অনেক দপ্তর একীভূত করেন। ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসিয়ে এরশাদ উচ্চতর আদালত বিকেন্দ্রীকরণেরও প্রয়াস চালান, কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে পরে তা খারিজ হয়ে যায়। এরশাদ সরকার দেশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমি সংস্কারেরও প্রয়াস চালান।
এ লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৮২ সালে ঘোষিত নতুন শিল্পনীতিকে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য আরো উদার করে এরশাদ ১৯৮৬ সালে আরেকটি শিল্পনীতি ঘোষণা করেন। এরশাদের আমলে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত লক্ষণীয়, বিশেষত তৈরি পোশাক খাতসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে। তাঁর অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল ভিত্তি ছিল সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতের নেতৃত্বে প্রবৃদ্ধি অর্জন। ব্যক্তিখাতকে শিল্প-বিনিয়োগে সহায়তা দিতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে এরশাদ ১৯৮৯ সালে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বিনিয়োগ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। বিশেষত উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকার কারণে এরশাদের অনুসারীরা তাঁকে ‘পল্লীবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেন।