বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে লিগ পর্বেই। কিন্তু টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে এখনও এগিয়ে আছেন সাকিব আল হাসান। সেমিফাইনাল থেকে দুই ফেভারিট ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিদায় টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে।
সেরার দৌড়ে সাকিবের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছিল ভারতের রোহিত শর্মা এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল স্টার্ককে।
সাকিবের স্বপ্নযাত্রা থেমেছে লিগ পর্বে। বাকি তিনজন বিদায় নিয়েছেন সেমি থেকে। পরিসংখ্যানে অবশ্য এখনও এই চারজনের জয়জয়কার।
নয় ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬৪৮ রান রোহিত শর্মার। ১০ ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪৭ রান নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছেন ওয়ার্নার। আট ম্যাচে ৬০৬ রান নিয়ে সাকিব আছেন তিনে। অন্যদিকে ১০ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৭ উইকেট মিচেল স্টার্কের।
তবে একদিক থেকে সাকিবের ধারেকাছেও নেই কেউ। দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিতে ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করার পাশাপাশি বল হাতে আট ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে কোনো ক্রিকেটারই এক আসরে এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে ন্যূনতম ৪০০ রানের পাশাপাশি ১০ উইকেট নেয়ার নজিরও নেই আর কারও। অর্থাৎ ব্যাটে-বলে সাকিবের মতো সব্যসাচী ক্রিকেটার দ্বিতীয়টি দেখেনি বিশ্বকাপ। এমন অনন্য কীর্তি গড়া একজন ক্রিকেটারের হাতেই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি সবচেয়ে ভালো মানায়।
সমস্যা অন্য জায়গায়। বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেয়া শুরু হয় ১৯৯২ আসর থেকে। সেই থেকে একটি অলিখিত নিয়ম চলে আসছে। ন্যূনতম সেমিফাইনালে খেলেছেন এমন দলের খেলোয়াড়ের দলে উঠেছে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার।
১৯৯২ আসরে নিউজিল্যান্ডের (সেমি) মার্টিন ক্রো (৪৫৬ রান), ১৯৯৬ আসরে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকার সনথ জয়সুরিয়া (২২১ রান ও সাত উইকেট), ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার (সেমি) ল্যান্স ক্লুজনার (২৮১ রান ও ১৭ উইকেট), ২০০৩ বিশ্বকাপে রানার্সআপ ভারতের শচীন টেন্ডুলকার (৬৭৩ রান ও দুই উইকেট), ২০০৭ আসরে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা (২৬ উইকেট), ২০১১ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারতের যুবরাজ সিং (৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট) এবং ২০১৫ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ২২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টসেরা হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও সাকিব কিন্তু ব্যাটে-বলে এসব পারফরমারদের চেয়েও এগিয়ে। দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড দলের পাঁচজন আছেন সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বীর তালিকায়।
ইংল্যান্ডের জো রুট ১০ ম্যাচে ৫৪৯ ও জনি বেয়ারস্টো করেছেন ৪৯৬ রান। ইংলিশ পেসার জফরা আর্চার ১০ ম্যাচে নিয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন নয় ম্যাচে ৫৪৮ রান করেছেন।
কিউই পেসার লকি ফার্গুসন আট ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। ফাইনালে দুর্দান্ত কিছু করে দলকে শিরোপা জেতাতে পারলে এই পাঁচজনের মধ্যে যে কেউ হতে পারেন টুর্নামেন্টসেরা। কিন্তু অলরাউন্ড নৈপুণ্য মানদণ্ড হলে এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাকিব। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তিন জয়েই তিনি ছিলেন ম্যাচসেরা।