মেয়ের বাবা ক্ষমতাসীন দলের নেতা। অন্যদিকে ছেলের পরিবার নিচু জাতের। কিন্তু প্রেমের টানে শ্রেণি-বৈষম্য ভুলে গিয়ে দু’জনে আবদ্ধ হয়েছেন বিয়ের বন্ধনে। কিন্তু অমতে বিয়ে করায় মেয়ে ও তার স্বামীকে মারতে গুণ্ডা পাঠিয়েছেন ক্ষমতাধর বাবা।
শুনতে অনেকটা সিনেমার গল্পের মতো মনে হলেও, এমন ঘটনা বাস্তবেই ঘটেছে। বাবা-ভাইয়ের রোষ থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়কের মেয়ে সাক্ষী।
আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দলিত ছেলেকে বিয়ে করে বাবা-ভাইয়ের রোষানলে পড়েছেন ২৩ বছর বয়সী সাক্ষী। তার বাবা রাজেশ মিশ্র বিজেপি বিধায়ক।
তিনি ও তার ব্যবসায়ী স্বামী অজিতেশ কুমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভিডিওতে জানিয়েছেন, তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন সাক্ষীর বাবা রাজেশ। এমনকি তাদের খুন করতে ভাড়াটে গুণ্ডাও পাঠিয়েছেন। ভয় দেখানো হচ্ছে অজিতেশের পরিবারকে। বাবার সঙ্গে এসব কাজে জড়িত সাক্ষীর ভাই ভিকিও। এমনই এক ভিডিওতে নিজেদের নিস্তার দিতে বাবা, ভাইয়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
সর্বশেষ ভিডিওতে দেখা যায় অজিতেশের পাশে বসে আছেন সাক্ষী। বাবা, ভাইয়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলছেন, ‘বাবা, আমার বিয়ে মেনে নাও। যে গুণ্ডাকে পাঠিয়েছো, আমাদের কিছু হলে সেই রাজীব রানার পুরো পরিবার জেলে যাবে। পালাতে পালাতে আমি ক্লান্ত। বাবা এবং ভাই তোমরা নিজেরা শান্তিতে থাকো, যত খুশি রাজনীতি করো, আমাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দাও।’
ভিডিওতে অজিতেশ বলেন, ‘একটা হোটেলে উঠেছিলাম। প্রচুর লোক এসেছিল আমাদের মেরে ফেলতে। ভাগ্য ভালো, সুযোগ বুঝে পালিয়ে যাই। আমি দলিত পরিবারের ছেলে। তাই তারা নিজেদের ইজ্জত বাঁচাতে এসব করছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওতে সাহায্য চাওয়া ছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টেও আবেদন জানিয়েছেন এই নবদম্পতি।
অন্য আরও একটি ভিডিওতে সাক্ষীকে বাবার উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, ‘বাবা, আমি সত্যিই বিয়ে করেছি। ফ্যাশন করে সিঁদুর পরিনি। দয়া করে মেনে নাও। অজিতেশের বাড়ির লোকজনকে ভয় দেখানো বন্ধ করো। বাবা, অজিতেশরাও মানুষ, জানোয়ার নয়। নিজের চিন্তাভাবনা বদলাও।’
তাদের এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন বলিউডের খ্যাতনামা পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপও।
এদিকে, স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, তারা ভিডিওটি দেখেছে। এই দম্পতিকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অজিতেশের বাড়ির সামনে প্রহরা বসানো হয়েছে। তবে ওই দম্পতি কোথায়, তা তারা জানে না।
অন্যদিকে, সাক্ষীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার বাবা। সাংবাদিকদের কাছে তার দাবি, ‘সব রাজনৈতিক চক্রান্ত। আমি বিয়ের বিরোধী নই। একটাই চিন্তা, ছেলেটি মেয়ের থেকে ৯ বছরেরও বেশি বড়। তেমন রোজগারও করে না। আমি চাই, ওরা বাড়ি ফিরে আসুক। এখানে উল্লেখ্য, তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে চারটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে।