জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাপা) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন এইচএম এরশাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর । তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান।
একনজরে দেখে নেব সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনের চুম্বক অংশ। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাবেক সেনা প্রধান, এককালীন প্রধান সামরিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায়।
নিজ শহর রংপুরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করে ১৯৫০ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৫২ সালে এরশাদ অফিসার পদে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। সময়ের পথ পরিক্রমায় ১৯৭৮ সালে নিয়োগ পান সেনা প্রধান হিসেবে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের পর রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ পেতে থাকে এরশাদের। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন।
১৯৮৬ সালের পয়লা জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সে বছর অক্টোবরে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। তবে বিরোধী দলের প্রবল আন্দোলনের মুখে পরের বছরই তৃতীয় জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হন। এরপর ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনও বর্জন করে বিরোধী দলগুলো। প্রবল গণঅভ্যত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন স্বৈরাচার এরশাদ।
১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সরকার কারাবন্দি করে এরশাদকে। ৯১ এর সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে এরশাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের হয়, যার কোনোটিতে সাজাও হয় তার।
২০০০ সালের দিকে ভাঙ্গন ধরে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। বিভক্ত হয় তিনটি উপদলে। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে ২০০৬ সালে যোগ দেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। তারপর থেকে তার দলকে সরকারী দল, বিরোধী দল, কখনোবা উভয় ভুমিকায় দেখা যায়।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ঘন ঘন অবস্থান বদল করার করার কারণে যতই সমালোচিত হোক এরশাদ, তার শাসনামলে দেশের অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নসহ বেশ কিছু কর্মকান্ড এখনো আলোচিত।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. উপজেলা ব্যবস্থার প্রবর্তন
২. জেলাপরিষদ কার্যকর
৩. মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত
৪. সার্ক গঠনের উদ্যোগ
৫. ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছ গ্রাম
৬. প্রান্তিক চাষীদের জন্য খাস জমি বিতরণ
৭. প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ এবং দেড় হাজার ছোট বড় সেতু নির্মাণ
৮. রোকেয়া সরণি, প্রগতি সরণী, বিজয় সরণীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক নির্মাণ
৯. মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়াম, হকি স্টেডিয়াম, আর্মি স্টেডিয়াম, মহিলা ক্রিড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো একজন সামরিক শাসক ও প্রবীনতম রাজনীতিকের জীবন। আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু হলো তার জাতীয় পার্টির।