ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী দুই ক্রিকেটারের প্রশংসায় মুসলিম বিশ্ব। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দেয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে তেরেসা মেও মদ পান করে শিরোপার উৎসব করেছেন।
তবে উৎসবে অংশ নিলেও ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ায় অ্যালকোহল তথা মদপান থেকে বিরত থাকেন ইংল্যান্ডের দুই মুসলিম ক্রিকেটার মঈন আলী ও আদিল রশিদ। তাদের এ কর্মকাণ্ড মুসলমানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মাদকবিরোধী সংগঠন ও স্বাস্থ্য সচেনত মানুষ ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল উপহার দিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে ইংল্যান্ড। শিরোপা জেতার আনন্দ উদযাপনে তারা ছিলো বেশ উৎফুল্ল। মদের বোতল তথা শ্যাম্পেন, হুইস্কির ঝাঝালো ছটা দিয়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা উদযাপনকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছেন।
সুপার ওভারে জেতার পর মাঠে যতোবারই তারা একত্রিত হয়েছে ততবারই হুইস্কি, শ্যাম্পেনের ঝাঝালো ছটা দেয়া হয়েছে। সব ক্রিকেটারের হাতেই ছিলো হুইস্কি বা শ্যাম্পেনের বোতল। কেবল ব্যাতিক্রম ছিলেন ইংল্যান্ডের দুই মুসলিম খেলোয়াড় আদিল রশিদ এবং মুঈন আলী।
উদযাপনের সময় যখনই বিয়ার বা শ্যাম্পেনের বোতল খুলে মদ ছিটানো হয়েছে তখনই নিজেদেরকে গ্রুপ থেকে সরিয়ে নিয়েছেন তারা দুজনে।
একবার দুবার নয় বরং তিনবার এমন হয়েছে। ট্রফি নিয়ে এক সঙ্গে উদযাপনের সময়ও তারা দুজন নিজেদেরকে সরিয়ে রেখেছে উদযাপন থেকে। মদ ছিটিয়ে উদযাপন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তারা দৌড়ে সরে যেতেও দেখা গেছে দুবার। এমনকি তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রাও। তাদেরকে পাশে সরে যেতে সাহায্য করেছেন তারা। তারা দুজন না সরে যাওয়া পর্যন্ত মদের বোতল খুলতেও দেখা যায়নি খেলোয়াড়দের।
মঈন আলী ও আদিল রশিদের এই কাজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়ে মুসলিমদের কাছে। সারাবিশ্বের মুসলমানরা তাদেরকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে ভিডিওগুলো। কেবল মুসলিমরাই নয় অনেক মুসলিমরাও তাদের এই ধর্মীয় অনুসাশন মেনে চলার মানসিকতাকে শ্রদ্ধার সাথে সমর্থন করেছেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলিম ক্রিকেটার হিসেবে এই দুজনের খ্যাতি জগতজোড়া। খেলার মধ্যেও যতটা সম্ভব ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে চলেন তারা। মদের কারণে দলের সঙ্গে তাদের শিরোপা উদযাপন না করার নজির এই প্রথম নয়। এর আগে গেল বছর ঘরের মাঠে ভারতকে ৪-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হারানোর পরও একই কারণে দলের সঙ্গে উদযাপনে যোগ দেননি তারা।
ইসলাম ধর্মে মদ সম্পূর্ণরূপে হারাম। মদ গায়ে লাগলেও তা নাপক বা অপবিত্র হিসেবে গন্য করা হয় ইসলাম ধর্মে। ইসলামের এই অনুসাশন মেনেই ইংল্যান্ডের দুই মুসলিম খেলোয়াড় মুঈন আলী এবং আদিল রশীদ নিজেদেরকে মদের সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
২০১৪ সালে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলী ‘সেভ গাজা’ ও ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’ লেখা রিস্টব্যান্ডস পরার কারণে মুসলিম বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
বিশ্বকাপজয়ী দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি জাঁকজমকপূর্ণ পার্টির আয়োজন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। প্রধানমন্ত্রী ভবনে আয়োজিত সেই পার্টিতে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী দলের সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বকাপজয়ী দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সৌজন্যতা সেরে প্রধানমন্ত্রী নিজের ভেরিফায়েড পেজ টুইটারে লেখেন, এমন একটি ক্রিকেট দল আমরা পেয়েছি, আগামী কয়েক প্রজন্ম যাদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দেশের সব মানুষের পক্ষ থেকে বিশ্বকাপজয়ী দলকে অভিনন্দন।
রোববার ইংল্যান্ডের লর্ডসে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। খেলার নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ টাই হয়। সুপার ওভারেও খেলা টাই হয়। তবে মূল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে ৮টি বাউন্ডারি বেশি হাঁকানোয় ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপজয়ী হিসেবে ঘোষণা দেয় আইসিসি।