হলে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রথম বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা একই হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন র্যাগিংয়ের শিকার গণিত বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল আলম। সোমবার (২৩ জুলাই) রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হলের প্রভোস্টের কাছে বুধবার এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন ফয়সাল আলম।
হল সূত্রে জানা যায়, র্যাগিংয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী জড়িত। তাদের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগের মো. শিহাব, ইতিহাস বিভাগের সারোয়ার শাকিল ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ফয়জুল নীরবের নাম জানা গেছে।
সোমবার রাত ১২টার দিকে হলের দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের গণরুমে যান। এ সময় তাদের মধ্যে শাকিল এক শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় জানতে চান। তখন ওই শিক্ষার্থী নিজেকে ফয়সাল আলম বলে পরিচয় দেন। এরপর শিহাব এসে আবারও ওই শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় জানতে চান। তখন ওই শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় দেন। এ সময় সর্দিজনিত সমস্যার কারণে ওই শিক্ষার্থীর কথা আস্তে শোনা যায়। এ অবস্থায় নাম না বলার অজুহাতে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে চিৎকার শুরু করেন তারা।
ভুক্তভোগী ফয়সাল আলম বলেন, আমি কেন জোরে কথা বলতে পারিনি এর শাস্তি হিসেবে আমাকে বিভিন্ন অশালীন কথা বলে তারা। পরে আমাকে গণরুমের জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে থাকার নির্দেশ দেয়। আমার হাতের তালুতে ক্ষত থাকায় এতে অসম্মতি জানাই। এ সময় শিহাব আমাকে কিল-ঘুষি ও থাপ্পড় দেয়। থাপ্পড়ের একপর্যায়ে আমার কান দিয়ে রক্ত ঝরে। আমি ফ্লোরে পড়ে যাই। পরে আমার বন্ধুরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে এসে শিহাব ও নীরবসহ চার-পাঁচজন এ ঘটনা কাউকে বললে আমাকে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। মঙ্গলবার বিকেলে আমার কানের অবস্থা আবারও খারাপের দিকে যায়। তখন আমাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনা জানার পর আমার এক ভাইয়ের মাধ্যমে ফয়সালকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করি। ডাক্তার দেখে বলেন এখন তার কানে হাত দেয়া যাবে না। রক্ত জমে আছে। এক সপ্তাহ পর জমাট বাধা রক্ত বের করতে হবে। এখন বের করলে কানের পর্দা ফেটে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মো. শিহাব ও সারোয়ার শাকিলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তবে আরেক অভিযুক্ত ফয়জুল নীরব বলেন, ওই দিন গণরুমে ফয়সালের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে পরিচয় দেয়। এরপর আমরা তাকে কিছু নির্দেশনা দিলে তা পালন করেনি। এতে ফয়সালকে মারধর করে আমাদের বন্ধু শিহাব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনা জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। যেহেতু এটি হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই হল প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হল প্রশাসন সহায়তা চাইলে প্রক্টরিয়াল টিম থেকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা নির্মম ও নিষ্ঠুর। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আজকের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দেবেন। এ ব্যাপারে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।