মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ মিয়ানমারের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সেটি সম্ভব না হলে তাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সীমানা নির্ধারণ করে দেয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন তিনি।
তুরস্কে চার দিনের এক ব্যস্ত সফরের মধ্যে শুক্রবার বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ এসব দাবি জানান।
সাক্ষাৎকারে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাবে ইরান ও ফিলিস্তিন সংকট ছাড়াও চীনের নির্যাতিত উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন।
মাহাথির জোর দিয়ে বলেন, ‘সাম্প্রতিক দুনিয়ার সব সন্ত্রাসের মূলে রয়েছে দখলদার ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের অবৈধ জন্ম। বৈশ্বিক সন্ত্রাস বন্ধ করতে চাইলে তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করা বন্ধ করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি উইঘুর মুসলমানদের দেশটির অন্য নাগরিকদের মতো সমান অধিকার দেয়ার জন্য চীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান চালিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে সময় প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে মালয়েশিয়া জাতিসংঘ, আসিয়ানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা মুসলিম সংকট নিরসনে সোচ্চার থেকেছে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, ‘মালয়েশিয়া সাধারণত কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালানো হয়েছে। আমরা সব সময় গণহত্যার বিরোধী এবং নিজ নাগরিকদের ওপর মিয়ানমার যে অবিচার করেছে, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং এটি মীমাংসিত। দেশটি এক সময় অনেক রাজ্যের ভিত্তিতে শাসিত হতো। কিন্তু, অনেক উপজাতি বসবাস থাকায় ব্রিটিশরা বার্মা নাম দিয়ে এক রাজ্য হিসেবে শাসন করে। এখন মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নিজ নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে; নতুবা তাদের নিজ রাষ্ট্রের জন্য সীমানা দিতে হবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মাহাথির বলেন, উভয় দেশ একই ইস্যুতে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাইলে কেবল আইসিজে কাজ করতে সম্মত হন। কিন্তু, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা একতরফা সিদ্ধান্ত দিলে কেউ মেনে নেবে না।
সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো এবং দু’দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণ বা নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করে আগেই তিনি বলেছিলেন, বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা রয়েছে। এর পরিবর্তে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যে তিনি স্বর্ণ ব্যবহার করার প্রস্তাবও দেন।
এখনও তারই পক্ষে মাহাথির, ‘হ্যাঁ, এটা খুবই সম্ভব। মালয়েশিয়া হচ্ছে একটা বাণিজ্যিক দেশ। দেশটা রফতানির ওপর নির্ভর করে। প্রায় ২০০ দেশে এই রফতানি করা হয়। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবরোধ আরোপ বা অন্য কোনো ধরনের বাধার মুখে এসব দেশের উন্মুক্ত থাকাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে তুরস্কের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা মার্কিন ডলার ব্যবহার করছি। কিন্তু, বিনিময় প্রথায় বাণিজ্য করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতে পারে। এমনকি নিজেদের মুদ্রা ব্যবহার করে বাণিজ্য করারও সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’