মেডিক্যাল শিক্ষার নিয়ন্ত্রক পরিষদ মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইণ্ডিয়ার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন চালু হওয়ার আইনি পথ প্রশস্ত হয়ে গেল। আজ রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিল। তবে রাজ্যসভায় ওই বিলে দুটি নতুন সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে এই বিল আবার লোকসভায় পেশ ও পাশ করাতে হবে। সম্ভবত আগামীকাল সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
তারপরই ওই বিল যাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে এবং রাষ্ট্রপতির সইয়ের পরই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বাস্তব রূপ পাবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিলে একঝাঁক সংশয়, আশঙ্কা ও আপত্তি রয়েছে বিরোধীদের। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন আজ বলেছেন, এই বিল হতে চলেছে মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ন্ত্রণে একটি বৈপ্লবিক ব্যবস্থা।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন নিয়ে সবথেকে বেশি যে কারণে জলঘোলা হচ্ছে সেটি হল এই কমিশনের অধীনে আগামীদিনে নির্দিষ্ট কলেজে এমবিবিএস পরীক্ষায় পাশ করার পরও পুনরায় একটি সর্বভারতীয় ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে হবে ডাক্তারি ছাত্রদের।
প্র্যাকটিস করার আগে রেজিস্ট্রেশন লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ওই পরীক্ষায় পাশ করা দরকার। অর্থাৎ ওইটিই হবে চূড়ান্ত পরীক্ষা। আবার পোস্ট গ্র্যাজুয়েটে ভর্তির জন্য অগ্রসর হওয়ার জন্যও ওই পরীক্ষা দিতে হবে। ওই সর্বভারতীয় পরীক্ষার নাম ন্যাশনাল এক্সিট টেস্ট (নেক্সট)। সুতরাং ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট এবং ন্যাশনাল এক্সিট টেস্ট দুটিই পরীক্ষাতেই বসতে হবে ডাক্তারি ছাত্রদের।
আরও জানা গিয়েছে, এই নয়া মেডিক্যাল কমিশনের আওতায় থাকবে একটি মানক বোর্ড। এককথায় মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যাণ্ড রেটিং বোর্ড। এই বোর্ড নির্দিষ্ট সময় অন্তর মেডিক্যাল কলেজের গুণমান যাচাই করবে, র্যাং কিং তৈরি করবে।
একইসঙ্গে কোনও মেডিক্যাল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু করার প্রস্তাব থাকলে সেই গ্রহণযোগ্যতাও খতিয়ে দেখে অনুমোদন দেবে অথবা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার থাকছে এই বোর্ডের। কার্যত, বিরোধী শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে আজ এই বিলও অনায়াসে পাশ করিয়ে নিয়েছে সরকার।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিলের বিরুদ্ধে বিরোধীপক্ষের সবথেকে বড় অভিযোগ হল এই বিলের মাধ্যমে মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও নীতি নির্ধারণ কিংবা পরীক্ষাগ্রহণ প্রতিটি স্তরেই রাজ্য সরকারের ভূমিকা খর্ব করা হয়েছে। পরিবর্তে অনেক বেশি ক্ষমতা আগামীদিনে চলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।
কমিশনের ২৫ সদস্যের মধ্যে সিংহভাগই কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত হবেন। কমিশনের চেয়ারপার্সনসহ পদাধিকারীদের নাম প্রস্তাব করবে যে সার্চ কমিটি সেই কমিটির সদস্যদেরও মনোনীত করবে কেন্দ্র। দেশে মোট ৮০ হাজার মেডিক্যাল আসন রয়েছে।
তার মধ্যে ৪০ হাজার সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। আর বাকি ৪০ হাজার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে।
আজ রাজ্যসভায় কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ বলেছেন, মেডিক্যাল আসনে ভর্তির ক্ষেত্রে এখন ৮০ শতাংশই ছিল রাজ্য সরকারের অধিকারে। কিন্তু এখন সরকারই ঘোষণা করেছে যে ৫০ শতাংশ থাকবে রাজ্যের হাতে। সুতরাং রাজ্যের অধিকার কমছে। দেশের চিকিৎসক মহল অবশ্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে একাধিক কারণে।
একদিনের ধর্মঘটও পালন করেছে তারা। চিকিৎসকদের সর্বাধিক আপত্তি কমিউনিটি হেলথ প্রোভইডার নামক একটি বিশেষ শ্রেণির কর্মীকে চিকিৎসা করার লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কমিশন প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারকে চিকিৎসা ও প্রেসক্রিপসন লেখার অনুমতি দেবে বলে স্থির হয়েছে।
দেশে, বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে ডাক্তারের অভাবকে সামাল দিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।