বস্ত্র আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি হওয়ায় এ ব্যবসা প্রাচীন কাল থেকেই আবহমান বাংলায় ঐতিহ্যের সাথে জড়িত হয়ে আছে। মসলিনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ইতিহাসের পাতাকে সমৃদ্ধ করেছে। আজকের দিনে কেউ যদি মসলিন উৎপাদন করতে পারেন তার অবস্থান কোথায় যাবে ভাবতে পারছেন কি? আজকের দিনে পোশাক মানুষের লজ্জা নিবারনের সাথে রুচিরও প্রকাশ ঘটাচ্ছে। আর তাই নিত্য নতুন ফ্যাশনেবল পোশাক মানুষের ব্যবসাকে করেছে দিনকে দিন সমৃদ্ধ। আর এ সুযোগটাকে আপনি কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে পারেন ফ্যাশন হাইজ।
ফ্যাশন হাউজের জন্য আপনার শহরের নির্দিষ্ট কোন মার্কেট, জনবহুল রাস্তার মোড় কিংবা বাস্তার পাশে স্থান নির্বাচন করে একটা দোকান নিয়ে নিতে পারেন। যেখানে সারাদিন প্রচুর মানুষ চলাচল করে। আপনার ব্যবসার আকার ও পুজিঁর ওপর নির্ভর করে আয়তন নির্বাচন করে দোকান নিতে হবে। দোকান বা শোরুম ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মালিকের সাথে ভালভাবে চুক্তিপ্রত্র করে নিতে ভূল করবেন না।
শোরুম ভাড়া নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হয়ে গেলেই আপনাকে যেটা করতে হবে শোরুমের ডেকোরেশন। সুন্দর একটা শোরুমের ডেরকোরেশন করে ফেলতে পারেন নিজের পছন্দ অনুযায়ী অথবা প্রফেশনাল কোন ডিজাইনারকে দিয়ে। স্থায়ী ডেকোরেশনের পছন্দের কাজটার জন্য ইন্টারনেটের সাহায্যও নিতে পারেন। আপনি কোন ধরনের পন্য আপনার শোরুমে বিক্রয় করবেন তার ওপর নির্ভর করে ডেকোরেশন এর কাজটি করতে হবে।
ডোকোরেশন এর সম্পূর্ন কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে শোরুমের জন্য একটা সুন্দর ও আকর্ষনীয় নাম নির্ধারন করে ফেলুন। আপনার শো রুমের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণা চালান বিভিন্ন মাধ্যমে।আপনার ফ্যাশন হাউজে কি ধরনের পোশাক বিক্রয় করবেন সে সিদ্ধানত নিতে হবে আপনাকেই। বিভিন্ন ধরনের রেডিমেট প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পোলো শার্ট, থ্রী পিচ, বাচ্চাদের পোশাক, শাড়ী, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী, ফতুয়া থাকতে পারে এ তালিকায়। রাখতে পারেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সমাহার। আপনার পুজিঁর ওপর নির্ভর করবে আপনি কিভাবে সাজাবেন।
দেশী পোশাক পাইকারী ক্রয় করে বিক্রয় করতে পারেন। আবার চাইলে নিজস্ব ব্যান্ডের পোশাক কারখানা থেকে তৈরী করেও বিক্রয় করতে পারেন। এজন্য নিজের কারখানা স্থাপন করতে হবে অথবা বিভিন্ন করখানায় অর্ডার দিয়েও নিজস্ব পছন্দের পোশাক তৈরী করিয়ে নিতে পারবেন। পাইকারী পোশাক পল্টন, গুলিস্তানের বিভিন্ন মার্কেট থেকে কিনতে পাবেন। কেরানীগঞ্জে পাইকারী পোশাকের বিশাল মার্কেট আছে। সেখানে ছোট ছোট পোশাক তৈরীর কারখানাও পাবেন।
শাড়ী লুঙ্গি পাইকারী ক্রেয়ের জন্য নরসিংদী, টাংগাইলের করটিয়া বাজার, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের হাট বাজার গুলোতে যেতে হবে আপনাকে। এর বাইরেও সেখানের তাঁত ঘর গুলোতে যোগাযোগ করে আপনি সংগ্রহ করতে পারেন তাদের উৎপাদিত শাড়ী লুঙ্গি। নির্দিষ্ট কোন ডিজাইন বা চাহিদা আপনার থাকলে সে অনুযায়ী তৈরী করে আনতে পারবেন তাঁত ঘর গুলো থেকে।
আপনার ফ্যাশন হাউজের পন্য সজ্জা এমন ভাবে করতে হবে যাতে খুব সহজেই ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়। শোরুমের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থাপন করতে পারেন সিসি ক্যামেরা। হিসাবের জন্য রাখতে পারেন কম্পিউটার। ব্যবহার করতে পারেন নির্দিষ্ট সফটওয়্যার। আর ব্যবসা শুরুর প্রক্কালে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করবেন। না হলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
ছোট আকার থেকে শুরু করে বড় আকারে, একটি শোরুম নিয়ে অথবা একাধিক শোরুম বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করে আপনি ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। এখানে আপনি পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের মত সুযোগ তৈরী করতে পারবেন এ খাতে। আপনার ব্যবসায়ের আকার, আয়তন, বিস্তৃতি, আপনার সামথ্যের ওপর নির্ভর করবে আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
সবইতো হল ক্রেতার কাছে চলুন বিক্রি করি। এ ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্য অবশ্যই ক্রেতার হাতের নাগালে রাখতে হবে পন্যের মান অনুসারে। লাভের অংশ কখনই অধিক করার চেষ্টায় ক্রেতা ঠকাবেন না। তাহলে আপনার ব্যবসায় শুরুতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ক্রেতার হাতে আপনার পন্য তুলে দিতে আপনার শোরুমের আকর্ষনীয় ব্যগ ব্যবহার করুন। তাতে আপনার ফ্যাশন হাউজের প্রচার বাড়বে।
দক্ষ কর্মী নিয়োগ করে এ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। তবে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিজের কাছে রাখলে ভাল করতে পারবেন। আপনি ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা থেকে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ মুনাফা করতে পারবেন। ধৈয্য পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয় ঘটাতে পারলে আপনার জন্য এ ব্যবসায় খুলতে পারে সৌভাগ্যের দ্বার।
উদ্যোক্তার খোঁজে