মসৃণ ও প্রশস্ত রাস্তা চাই। চাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত প্রশাসনিক সমন্বিত সহযোগিতা। উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে এর চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন নেই। আসলে, আমাদের তরুণরা অনেক বেশি প্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য মসৃণ পথ দরকার। না থাকলেও অবশ্য তরুণরা তা তৈরি করে নিতে পারে। তবে এতে কিছুটা জীবনের ক্ষয় হয়। লাভও যে নেই- তা না। বরং লাভ-ই বেশি। কেননা, এর মধ্য দিয়ে দিয়ে তারুণ্য অভিজ্ঞতা লাভ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
তারপরও তিনি বলেন, তরুণদের এগিয়ে যাবার পথটা বাধামুক্ত হলেই অন্যরকম এক বাংলাদেশ দেখতে পাবে বিশ্ব। যাঁর কথা বলছিলাম, তিনি আর কেউ নন। চট্টগ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত।
১৯৯১ সালে ১০০ জন কর্মী ও ১০ প্রকার ওষুধ প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে বাবা মো. নেজাম উদ্দীন এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের যে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০১৭ সালে এসে তা ‘এলবিয়ন স্পেসালাইজড ফার্মা’ নামে বিলিয়ন টাকার ব্যবসায় এসে ঠেকেছে। অচিরেই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা লিমিটেড। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মীবাহিনী নিয়ে এলবিয়ন গ্রুপ দেশ ও দেশের বাইরে বছরে ব্যবসা করছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মতো।
নিজ প্রচেষ্টায় ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ থেকে সৈকত গড়ে তুলেছেন আরও ৫টি প্রতিষ্ঠান। এলবিয়ন এ্যানিমেল হেলথ লিমিটেড, এলবিয়ন কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, এলবিয়ন ট্রেডিং কর্পোরেশন, এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা লিমিডেট এবং ফ্যাভারিটা লিমিডেট। এছাড়া ডেলটা হেলথ কেয়ার নামে একটি আধুনিক হাসপাতালের পরিচালকও তিনি।
সৈকত বলেন, বাবা নেজাম উদ্দীন চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার ভাড়া করা বাসায় যে কারখানার ফিতা কেটেছিলেন সে কারখানা এখন সাত একর জায়গা জুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সৈকত বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তীরণ বাজার এখন অনেক বড়। প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার উপরে। এছাড়া দেশের বাইরে রপ্তানি করে এ শিল্প থেকে হাজার কোটি টাকা আয় করছে সরকার। আর এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার জন্য।
ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানা হিসেবে এলবিয়ন গ্রুপের এগিয়ে যাবার কৃতিত্বটা একা নিতে নারাজ সৈকত। বলেন, আমার ছোট ভাই মুনতাহার উদ্দীন সাকিব ও ছোট বোন তাসনুভা আফরিন এলবিয়ন গ্রুপের উন্নতির সম-ভাগিদার। তবে সবার উপড়ে ছায়া হয়ে এখনও আমাদের এগিয়ে যাবার সাহস যোগায় আমাদের বাবা নেজাম উদ্দীন ও মা শওকত আরা হক।
১৯৮১ সালে ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন তরুণ উদ্যোক্তাদের আইডল জুনিয়র চেম্বারের সাবেক সভাপতি রাইসুল উদ্দিন সৈকত। চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড থেকে ১৯৯৭ সালে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করে অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার সাইয়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি নেন রাইসুল উদ্দিন সৈকত। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড-এ।
২০০৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাসনিন মাহমুদ’র সাথে। বড় ছেলে আহমেদ যায়ান আরিশ’র জন্ম ১০ মে, ২০১০ এবং মেয়ে ইয়ারিকা ইলমায়েতের জন্ম ২১ জানুয়ারি ২০১৫। সৈকত বলেন, এ সময়ের তরুণরা সৃজনশীল। ভিন্ন-ভিন্ন চিন্তাধারার কাজ করার মানসিকতা তরুণদের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে যা অত্যন্ত আশাবাঞ্জক। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় নতুনত্ব না থাকলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন।
চায়ে চুমুক দিতে-দিতে তিনি বলেন, লং জার্নি স্টার্টস ফ্রম আ সিঙ্গেল স্মল স্টেপ। স্বপ্ন বড় হতে পারে কিন্তু শুরু করতে হবে ছোট থেকেই। নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সৈকত বলেন, নিজের ইচ্ছাশক্তিকে প্রাধান্য দিন। বিশ্বাস রাখুন নিজের উপর। দেখবেন সফল আপনি হবেনই।
মানুষ হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে কখনোই ভালো ব্যবসায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি। সু-সম্পর্ক ব্যবসার মূল ভিত্তি দাবি করে তিনি আরও বলেন, মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে আসুন, দেখবেন আপনার প্রয়োজনে মানুষ এগিয়ে আসবে।
চট্টগ্রামের তরুণ এই ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত মুখ রাইসুল উদ্দিন সৈকত তরুণ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে যুক্ত হয়েছেনÑ এসিস্টেন্ট টু ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট অব জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (২০১৭), কমিটি চেয়ার অব পার্টনারশিপ জুনিয়র চেম্বার (২০১৬), ন্যাশনাল ডাইরেক্টর- জুনিয়র চেম্বার অব বাংলাদেশ (২০১৬), প্রেসিডেন্ট- জুনিয়র চেম্বার অব চট্টগ্রাম (২০১৪)।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রামু গলফ্ ক্লাব এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, চট্টগ্রাম খুলশি ক্লাব। পার্মান্যান্ট মেম্বার হিসেবে আছেন, চিটাগাং বোট ক্লাব, শাহিন গলফ্ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, ভাটিয়ারি গলফ্ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, অফির্সাস ক্লাব অব চিটাগাং ইত্যাদিতে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ, চিটাগাং প্রেস ক্লাব, চিটাগাং ডায়াবেটিকস্ হাসপাতালের আজীবন সদস্য তিনি। সবকিছুর মূলেই একটা স্বপ্ন তাঁর- অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়া।
তথ্যসূত্র: দ্যা ক্লিক ম্যাগাজিন ডটকম।