একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উদ্যোক্তা,যে কিনা অন্যদের চেয়ে অনেক বড় কিছু অর্জন করে,তার নির্দিষ্ট কিছু গুন আছে যা তাকে আলাদা করে অন্য সবার থেকে।যেসকল উদ্যোক্তারা তার লক্ষ্যের পেছনে লেগে থাকে,শ্রেষ্ঠ উপায় বের করতে চেষ্টা করে,তারা তাদের অর্থনৈতিক উদ্যোগে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে।
নিচের তালিকাটি আমি সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক নেতাদের জীবন,বিশেষতঃ কোন জিনিসটা তাদেরকে অন্যদের থেকে উপরে স্থান দিয়েছে তা নিয়ে পর্যালোচনা করে তৈরি করেছি। সু-সংবাদ হল এই যে,এই পথপ্রদর্শকেরা জন্ম নেননি,তাঁরা তৈরি হয়েছে।নিচের তালিকাটি এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যেন আপনি বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠদের থেকে দ্রুত কিছু শিখতে পারেন ও তাদের সফলতার পথকে অনুসরণ করতে পারেন।
যখন সফলতা অর্জনের জন্য আপনি আপনার নিজস্ব কৌশলের ব্যপারে সচেতন হবেন ও এমন কোন পরিকল্পনা করবেন যা আপনি অনুসরণ করবেন,তখন আপনি অবিশ্বাস্য প্রেরণা পাবেন যা আপনাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে। তাই প্রস্তুত হয়ে যান সেই সফলতা অর্জন করতে যা কেবল সত্যিকারের ব্যবসায়ী ও সফলতা অর্জনকারীদের জন্যই নির্ধারিত।এই দশটি আদর্শ আপনাকে সফলতা দেবে ১১০%,ধারাবাহিকভাবে সেগুলো পালন করুন ও আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে আগামি ছয় মাসের মধ্যে আপনি আপনার জীবনকে সম্পূর্ণভাবে বদলে ফেলতে পারবেন!
১/উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও উদ্যমঃ
যা আপনাকে বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে এবং আপাতদৃষ্টিতে যে কাজ অসম্ভব বলে মনে হয়,তা সম্পন্ন করার শক্তি প্রদান করে।অপ্রতিরোধ্য সংকল্প খারাপ সময়েও আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় যখন আর অন্য কোন আশাই থাকেনা।আপনার লক্ষ্য/উদ্দেশ্য/আপনার ব্যবসার মূল মান/জীবন এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে উদ্যমী থাকতে হবে।প্রতিটি অবস্থাকে বস্তুগত পন্থায় মূল্যায়ন করার শক্তি যোগায়,যা সর্বদা আপনাকে সঠিক নির্দেশনায় পরিচালিত করে।
২/নিয়মনিষ্ঠ কর্মনীতি ও উচ্চমানসম্পন্নতাঃ
এর মধ্যে রয়েছে সততা,ন্যায়পরায়ণতা ও জনসাধারণের প্রতি মনোযোগ।যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে একজন কার্যকরী সত্তা হওয়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।এর অর্থ হল যে আপনি সঠিক কাজই করছেন ও নিজের শক্তিকে সঠিক রাস্তায়ই ব্যয় করছেন।ব্যবসা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে ব্যবসাকে চালানোর উপর আপনার ৮০% মনোযোগ থাকা উচিত।
৩/সাহসিকতা ও স্থিতিশীলতাঃ
আপনি যদি ঝুঁকি গ্রহণে আগ্রহী হন যেখানে অন্যরা অনাগ্রহী,এটা আপনাকে অনেক বেশি কিছু এনে দেবে।নিশ্চিত হোন যে আপনি আপানার পারিপার্শ্বিক সমগ্র অবস্থার মূল্যায়ন করেছেন ও পরিকল্পিতভাবে ঝুঁকি গ্রহন করছেন।সত্যিকারের সাহসিকতা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।যদি আপনি অসফল হন,তবু ভিন্ন কিছু চেষ্টা করুন।যদি আপনি অসফল হওয়াতে ভয় না পান,তাহলে একদিন তা-ই আপনাকে সোনালি দিন দেখাবে।
৪/আত্মবিশ্বাসঃ
অন্যভাবে বলা যায় যে ব্যবসা ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে সঠিক মনোভাব থাকা।দীর্ঘ সফলতার জন্য এটা একটি মৌলিক ও বিরল বৈশিষ্ট্য।এটা আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করে কারণ আপনি আত্মবিশ্বাসী যে আপনি যা চান তা পাবেন।একজন সত্যিকারের আত্মবিশ্বাসী মানুষের পরিচয় মেলে তার দায়িত্ববোধের মধ্যে।দোষারোপ করা আত্মবিশ্বাসী মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়।তারা আর্থিক অবস্থা,ভাগ্য,খারাপ সম্পর্ক,আবহাওয়া,বাজার বা কর্মচারীদের দোষ দেননা।তারা কিভাবে সব বদলানো যায়,তার-ই চেষ্টা করে থাকেন।ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষ জীবন ও ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা গ্রহণ করে।তারা খারাপ জিনিসগুলো ভবিষ্যতে ত্যাগ করার চেষ্টা করে।
৫/শ্রমিক নেতৃত্বঃ
এটি এমন এক ক্ষমতা যাতে আপনি ব্যবসার লক্ষ্য অনুসারে জনমত নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অন্যদের সে অনুযায়ী কাজ করাতে পারেন।আমি একে প্রেরণাই বলব।যারা ফলাফল সম্পর্কে জ্ঞান রাখে,তারাই দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।শ্রমিক নেতা বলতে বোঝায় যারা তাদের দলের পক্ষ থেকে সামনে এগিয়ে আসে,তাদেরকে শেখায় ও সফলতা অর্জনের পর একই রকম আনন্দ ও উত্তেজনা বোধ করে।
৬/সৃজনশীল মনঃ
নিজে চিন্তা গবেষণা করার ক্ষমতা একটি জটিল বিষয়।এটা এমন ক্ষমতা যা প্রয়োজনবোধে সব বদলে ফেলতে পারে।নিয়ন্ত্রিত নমনীয়তা সফলতার একটি চাবি।ব্যবসার শুরু থেকে অবশ্যই একটি কাঠামো ও নিয়ম থাকতে হবে।লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন তখনই সাধিত হয় যখন আপনি আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা ও লক্ষ্যকে নিয়মিত মূল্যায়ন ও মানিয়ে নেবেন আপনার লক্ষ্য/উদ্দেশ্য/মূল মান যা শুরু থেকেই নির্ধারিত তা অর্জন করতে।
৭/আপনার নিজের যোগ্যতা/শক্তিমত্তা/গুণ ও আচরণের ধরণের উপর পূর্ণ জ্ঞান থাকাঃ
যখন আপনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে ভালোভাবে বুঝবেন,তখন আপনি যে পরিস্থিতিতেই থাকেন না কেন সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।যখন আপনি অন্যদেরকে তাদের তুলনায় বেশি বুঝবেন,তখন তাদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।এতে আপনার সুবিধা হবে।কারণ আপনি আপনার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করেছেন ও এখন আপনার ব্যবসায়িক সকল লেনদেনে সফলতার চূড়ায় এসে গেছেন।
৮/অন্যদের বোঝার ও সাহায্য করার অদম্য ইচ্ছা,নিজের চেয়ে তাদের ইচ্ছাকে বেশি মূল্যায়ন করাঃ
যখন অন্যদের সফলতায় যথাসাধ্য সাহায্য করার জন্য আপনি ভিন্ন ধরণের কোন পথ পাবেন,তখন তার ফলস্বরূপ আপনি যা চান তা-ই পাবেন।অন্যরা মনোরম-শৈলীর যা খুঁজছে তা দেওয়ার জন্য সেটা আবিষ্কার করুন ও নিজেকে প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখুন।আপনার জীবনের সকল ক্ষেত্রের ভাল সম্পর্কগুলো আপনার ব্যবসায়িক সাফল্যকে ত্বরান্বিত করবে।বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিগত দক্ষতার চেয়ে নমনীয়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ,বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য।
৯/অসফলতা গ্লানিকে ঝেড়ে ফেলুনঃ
সকল ক্ষেত্রে যতোটা সম্ভব সঠিক বিশ্বাসের এর সর্বোচ্চ সীমা পাওয়ার ও ধরে রাখার চেষ্টা করুন।যতোটা সম্ভব উচ্চে লক্ষ্য স্থির করুন ও নিজের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিকে বিস্তৃত করুন।যারা তাদের লক্ষ্যকে স্থির করে ও নিয়মিত মূল্যায়ন করেন তারা অন্যদের তুলনায় ৯২% বেশি জনপ্রিয় হয়ে থাকেন।যদি একবার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন,তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রা বারবার ক্রমানুসারে বাড়াতে থাকেন।তারা বিফলতাকে ভয় পাননা কারণ বিফলতা একজন সাধারণ মানুষের জন্য শুধুমাত্র শিক্ষা,কিন্তু সফলতা অর্জনকারীর জন্য অভিজ্ঞতা।সফলগণ অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বারংবার লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকেন।
১০/বিনিময় প্রদানঃ
যে সকল কোম্পানি কমপক্ষে ১০% দান করতে বা অন্য কারনে ছাড় দিতে পারে এবং অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে তৎপর তারাই অনেক বেশি শুভ কামনা পেয়ে থাকে তাদের ব্যবসায়-এমনকি অনাখাঙ্খিত মাধ্যম থেকেও।এটা অর্থনীতির একটি মৌলিক নীতি যা অনেকবারই প্রমাণিত হয়েছে।এই ধরণের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সাথে ব্যবসা করার পরিবর্তে,তাদের আকৃষ্ট-ই করে থাকেন।
লেখক: কাজী নিয়াজ।
তথ্যসুত্র: আমার ব্লগ ডটকম।