দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও টানাপোড়েনের প্রভাব সাম্প্রতিক চামড়া বাজারের বিপর্যয়ের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই সেটি মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি, যার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া পড়বে আমাদের চামড়াশিল্পের ওপর।
বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়িতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
এ সময় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, যুবদল নেতা আবু তাহের দুলালসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজির জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পূর্ব পরিকল্পনার অভাব, ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার জন্য সুবিধাজনক ঋণ প্রদানে অনীহা, এসব কারণেই এই নজিরবিহীন নৈরাজ্য ঘটেছে। আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পশুপালনকারী, চামড়ার ক্রেতা- এমনকি চামড়ার সঙ্গে যুক্ত বড় ব্যবসায়ীরাও।
সরকারের উন্নয়নের স্লোগানকে গণপ্রতারণা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তথাকথিত মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে সরকার দাবি করছে— তারা উন্নয়নের রোল মডেল, দেশের বিরাট একটা উন্নয়ন করে ফেলেছে। কিন্তু তাদের সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন, এসব আসলে আরেকটি গণপ্রতারণা।
ব্যাংকিং সেক্টরে নৈরাজ্য বিরাজ করছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজ মানুষ টাকা তুলতে গেলে টাকা পায় না। সরকার টাকা নিয়ে টাকা ব্যাংককে ফেরত দেয় না। আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি খরচ বাড়ানো হচ্ছে, যা আসছে জনগণের ট্যাক্স থেকে। আগে একটা পরিবার থেকে একটা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একজন থাকতে পারতেন, এখন সেখানে একই পরিবারের চারজন থাকার নিয়ম করা হয়েছে। এভাবে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজনের কাছে চলে যাচ্ছে জনগণের সব টাকা।
জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই এবং জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত নন বলেই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সে কারণেই তারা জনসাধারণ ও দেশের জন্য অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছেন।
অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের এক বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া এমন কিছু করেননি যে, তাকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি অন্যায় বা কোনো অপরাধ করেননি। নিছক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরিতার্থ করতে সরকার ক্ষমতার জোরে তাকে বন্দি করে রেখেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইন সরকার ও শাসকদের করায়ত্ত, তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।