আওয়ামী লীগ একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই দেখছি-আওয়ামী লীগ একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি করছে। ২১ আগষ্টের ঘটনা ছিল গভীর নীলনকশার অংশ, যে নীলনকশার সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত কি না তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলার সামগ্রিক সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতো। কিন্তু তা না করে সুপরিকল্পিত নীলনকশা অনুয়ায়ী এই ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক কায়দায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে আসছে আওয়ামী লীগ। তার বড় প্রমাণ হলো কথিত সম্পূরক চার্জশিটের নামে এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়িয়ে ফরমায়েশী রায়ে সাজা দেয়া। যা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ও দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যানের ফসল।’
২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘মিসেস আইভি রহমানসহ অনেক নারী-পুরুষের জীবননাশ ও আহত হওয়ার নৃশংস ঘটনায় আমরা তখনও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি-এখনও জানাই।’
২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপি সরকারকে জড়িত করে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘কেবল প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই নন, আমরা বিস্মিত হয়েছি যখন দেখেছি দুই-একটি পত্রিকা এবং সরকারি নেতাদের মালিকানাধীন টেলিভিশনে ইনিয়ে বিনিয়ে বেসামাল ভাষায় বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ওপর দোষ চাপাতে অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য, প্রকৃত ঘটনা এভাবে মিথ্যাচার আর অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযাগ্য করা যাবে না’।
মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিতে গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বন্দুক ব্যবহারের কথা নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও সিকিউরিটি অফিসার নাজিব আহমেদ বলেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে অসংখ্য গুলি করা হয়েছে। এ বন্দুক ও গুলি এলো কোথা থেকে?’
রিজভী বলেন, ২০০৮ সালের ১১ই জুন বর্তমান আইজিপি ও তৎকালীন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি জাবেদ পাটোয়ারীর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা চালায় হরকাতুল জিহাদ। জাবেদ পাটোয়ারীর তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও তারেক রহমান বা বিএনপির নাম ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাটি তদন্ত করতে তৎকালীন বিএনপি সরকার মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এফবিআইকে তদন্ত কাজে কোনো প্রকার সহায়তা করা হয়নি। এমনকি শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়িটিও দেখতে দেওয়া হয়নি। কেন তারা সুষ্ঠু তদন্ত করতে দিলো না-এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। এরকম অনেক প্রশ্নের কোন সমাধান হয়নি আজো।
রিজভী বলেন, ‘যেকোনো সরকারের আমলে কখনও কখনও অনাকাঙ্খিত এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যার জন্য সেই সরকার দায়ী হতে পারে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমূখী চক্রান্তকারীদের এজেন্টরা দেশে-দেশে নানা নাশকতা করেছে। ২১শে আগষ্টের জন্য যদি বিএনপি সরকার দায়ী হয়, তাহলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য কেন আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী হবে না? কেন মুক্তচিন্তার ব্লগার, যাজক-পুরোহিত-ইমাম-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-লালন সাধকদের হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী সরকার দায়ী হবে না? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীনই তো যশোরের উদীচির অনুষ্ঠানে, খুলনার কাদিয়ানী মসজিদে, ঢাকায় সিপিবি’র সমাবেশে, রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানে, গোপালগঞ্জে ক্যাথলিক গীর্জায়, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে, বাগেরহাটের কলেজ মাঠে আক্রমণ ও বোমা হামলা হয়েছে এবং গোপালগঞ্জে দুটি শক্তিশালী তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। তাহলে কি এর দায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সরকারের ওপর বর্তায় না?
২১ শে আগষ্টের বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও নেতারা নির্বিঘ্নে এবং ক্রমাগত এমন বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন যা মামলার রায়কে প্রভাবিত করে আসছে এমন অভিযোগও করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।