পুরাতন টায়ার ব্যবহারের পর একসময় ফেলে দেওয়া হত। কিন্তু এটাকে এখন পুনঃব্যবহার উপযোগী করে ব্যবহার করা ছাড়াও করে পুড়িয়ে মূল্যবান জ্বালানী তেল বের করা হচ্ছে। সেই সাথে উৎপাদিত হচ্ছে ছাপার কাজে ব্যবহারযোগ্য কালি। আপনিও চাইলে এধরনের ব্যবসায় স্থাপন করে ঘুরিয়ে নিতে পারেন আপনার ভাগ্যের চাকা।
বাজারের ফার্ণেস অয়েলের তুলনায় টায়ারের অয়েলের উৎপাদন খরচ অনেক কম। তাই এ তেলে লাভ অনেক বেশি থাকবে। এ ধরনের একটি কারখানা থেকে দৈনিক গড়ে ৩-৪শ’ লিটার জ্বালনি তেল উৎপাদন সম্ভব। অব্যবহৃত পুরাতন টায়ার গলিয়ে তৈরি হচ্ছে ফার্ণেস অয়েল যা কলকারখানা, যানবাহন ও অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ব্যবহার করা যায়।
প্রথমেই কারখানার জন্য জমি নির্বাচন করতে হবে। ২-৩ বিঘার একটি জায়গা লাগবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে কারখানার কাজ শুরু করতে হবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মধ্যে পরিবেশ দূষণমুক্ত বিশেষ চুল্লি লাগবে। কাঁচামাল হিসেবে লাগবে পুরনো ও বাতিল টায়ার। পুরাতন টায়ার কিনে বিশেষ চুল্লিতে পুড়িয়ে দক্ষ কারিগর দিয়ে ফার্ণেস অয়েল তৈরি হয়। এ ধরনের একটি কারখানায় ১০-১৫ জন শ্রমিক লাগবে।
সম্ভাব্য পুঁজি: ৩০০০০০০ টাকা থেকে ৫০০০০০০ টাকা পর্যন্ত। সম্ভাব্য লাভ: মাসে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বাজারজাতকরণ: বিভিন্ন কলকারখানা, যানবাহন, অ্যালুমিনিয়াম কারখানা, প্রেস ও প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান এ পণ্যের ভোক্তা। যোগ্যতা: দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দিতে হবে।বিচক্ষণতার সাথে পরিচালনা করতে হবে।
টায়ার থেকে জ্বালানী তেল উৎপাদনে সফল বগুড়ার বিপ্লব: তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের এই দুর্মূল্যের বাজারে নতুন এক আশার আলো জাগিয়েছেন বগুড়ার বিপ্লব। বাস, ট্রাক, বাই সাইকেল ও মোটর সাইকেলের ফেলে দেয়া পরিত্যক্ত টায়ার থেকে মূল্যবান জ্বালালি তেল উৎপাদন করে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছেন।
সেইসঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেলের যোগান দিতে পারায় বগুড়ায় নতুন করে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণকারী যানবাহনের পরিত্যক্ত টায়ার ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, তেমনি ফেলনা জিনিস থেকে উৎপাদিত মূল্যবান জ্বালানি তেল দিয়ে নতুন শিল্পকারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ছে বিনিয়োগ সম্ভাবনাও।
পরিত্যাক্ত টায়ার থেকে রীতিমতো ফার্নেস ওয়েল তৈরি হচ্ছে বগুড়াতেই। বিভিন্ন ভারী শিল্পকারখানার জ্বালানি হিসেবে টায়ার থেকে তৈরি ফার্নেস ওয়েল কাজে লাগানো হচ্ছে। টায়ার থেকে উৎপাদিত এই ফার্নেস ওয়েল দিয়ে চলছে বগুড়ার অ্যালুমিনিয়াম শিল্প।
টায়ার থেকে শুধু ফার্নেস ওয়েলই উৎপাদিত হবে না। এই ফার্নেস ওয়েলকে পরিশোধন করে ডিজেল তৈরির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছেন বিপ্লব। ধারণা করা হচ্ছে, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বগুড়াতেই পরিত্যক্ত টায়ার থেকে উন্নত মানের ডিজেল তৈরি হবে। সাশ্রয়ী মূল্যের সেই ডিজেলে চলবে বাস, ট্রাকসহ নানা যানবাহন। চলবে সেচ পাম্পসহ অন্যান্য মেশিন। এমনকি এখান থেকে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসও পাওয়া সম্ভব বলে জানালেন উদ্যোক্তা।
টায়ার থেকে শুধু জ্বালানি তেলই উৎপন্ন হচ্ছে না। একইসঙ্গে ছাপাখানাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান কালি কার্বনব্ল্যাকও তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও টায়ার থেকে বের হওয়া তারগুলো চলে যাচ্ছে ফাউন্ড্রি শিল্পে এবং স্টিল রিরোলিং মিলে। সেখানে তৈরি হচ্ছে মূল্যবান রড। একইসঙ্গে টায়ার থেকে এসব মূল্যবান উপাদান পাওয়ায় এই শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার দেওগ্রাম দুর্গাপুর সড়কে আফরুজা বার্নিং ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ নামের এই কারখানটি চায়না কারিগরি প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণ বর্জ ও পরিবেশ দূষণমুক্তভাবে চলছে। প্রায় এক একর জমির ওপর নির্মিত নতুন এই কারখানাটি পুরোপুরি চালু করা হলে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার জ্বালানি তেল উৎপাদিত হবে বলে জানালেন কারখানার উদ্যোক্তা বিপ্লব।
পরিত্যক্ত টায়ারের পোড়া ছাই উন্নতমানের কার্বনব্ল্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হবে প্রেসে প্রিন্টের কাজে ও জুতার কালি, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন কাজে। এজন্য এই কারখানার এসব কালি নিতে অনেকই যোগাযোগ করছেন।
বিপ্লবের তথ্যমতে, বাজারে এখন ফার্নেস ওয়েল ৬০ টাকা লিটার। টায়ার থেকে উৎপাদিত তেল তিনি লিটার প্রতি ১৫ টাকা সাশ্রয়ে মাত্র ৪৫ টাকা লিটার বিক্রি করবেন বলে জানান। হাতের কাছে লিটারে ১৫ টাকা সাশ্রয়ে পাওয়া এই জ্বালানি তেলে যেকোনো শিল্প উদ্যোক্তা ব্যাপক লাভবান হওয়ার সুযোগ পাবেন।
উদ্যোক্তা বলছেন, এই শিল্পে সরকার সহযোগিতা করলে গোটা দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। কারণ প্রতিদিন বিদেশ থেকে ফার্নেস ওয়েল আমদানিতে সরকারের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া ফার্নেস ওয়েলে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
এক্ষেত্রে দেশেই যদি টায়ার থেকে তেল উৎপাদনের এই শিল্পকে বিকশিত করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে না, অন্যদিকে তেমনি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। সেইসঙ্গে সচল হবে দেশের অনেক বন্ধ হয়ে থাকা কারখানা ও শক্তিশালী হবে দুর্বল ভারী শিল্প কারখানা। সূত্র: উদ্যোগতার খোজে