আরো ১১ রাজনীতিবীদকে নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী শ্রীনগর বিমানবন্দরে পৌঁছালেও তাদের সেখান থেকেই দিল্লিতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
সরকারি নিষেধ উপেক্ষা করে রাহুল তার সহযাত্রীদের নিয়ে শনিবার জম্মু ও কাশ্মীর রওয়না হওয়ার ঘোষণা দেন।
তবে রাহুলের দলকে শ্রীনগরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া নিয়ে তখনই সংবাদমাধ্যমগুলো সন্দেহ প্রকাশ করেছিল।
কারণ, বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক নেতাকে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার গত ৫ অগাস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটিকে কেন্দ্রশাসিত দুইটি অঞ্চলে ভাগ করে।
বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকেই সেখানে বিশেষ করে রাজ্যের সবচেয়ে বড় নগরী শ্রীনগরে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং নানা জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর শ্রীনগর উপকণ্ঠের সোউরায় শত শত বিক্ষোভকারী সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে বলে জানায় বিবিসি।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে তারা পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে অন্তত দুই বিক্ষোভকারী আহত হন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিবিসির এক প্রতিনিধি বলেন, আহত একজনের চোখ থেকে রক্ত পড়ছিল। অন্যজন গলায় আঘাত পেয়েছেন।
যদিও ঠিক কতজন আহত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ আহত অনেকে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাননি বলে জানায় বিবিসি।
এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক নেতাদের কাশ্মীর সফর করা উচিত হবে না বলে এক টুইটে পরামর্শ দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীর ইনফরমেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন অধিদপ্তর।
“এমন একটা সময় যখন সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা সন্ত্রাসবাদ ও হামলা থেকে সুরক্ষার চেষ্টা করছেন তখন রাজনৈতিক নেতাদের শ্রীনগর সফরে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, তাতে অন্যান্য লোকজন অসুবিধায় পড়বেন....।”
রাহুলের আগে কংগ্রেস পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা গুলাম নবী আজাদ দুইবার কাশ্মীর যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। দুইবারই তাকে জম্মু বিমানবন্দরে আটকে দিয়ে জোর করে দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার তিনি এ চেষ্টা করেছিলেন বলে জানায় এনডিটিভি।
রাহুলকে অবশ্য জম্মু ও কাশ্মীরের গভর্নর সত্য পাল মালিক গত ১১ অগাস্ট পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখতে কাশ্মীর সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন তিনি রাহুলের জন্য কেন্দ্র থেকে দেওয়া উড়োজাহাজ পাঠাতেও চেয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমি রাহুল গান্ধীকে এখানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি আপনাকে উড়োজাহাজ পাঠাবো, যাতে আপনি এখানে এসে পরিস্থিতি দেখে তারপর কথা বলেন। আপনি একজন দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং আপনার এভাবে না দেখে কিছু বলা উচিত না।”
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর রাহুল বলেছিলেন, তিনি সেখানে ‘সংঘর্ষ এবং বহু মানুষের মৃত্যুর’ খবর পাচ্ছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর তাকে ওই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
গভর্নরের আমন্ত্রণ পাওয়ার দুই দিন পর রাহুল তা গ্রহণ করেন। কিন্তু ততক্ষণে গভর্নর তার মত বদলে আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করেন এবং রাহুলের ভ্রমণের উপর কিছু শর্ত আরোপ করে বিবৃতি দেন।
গভর্নর মালিক বিবৃতিতে বলেন, “রাহুল গান্ধী তার সঙ্গে বিরোধীদলের প্রতিনিধিদের আনতে চেয়ে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন। যা আরো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং এখানে সাধারণ মানুষ অসুবিধায় পড়তে পারেন।” শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন থেকে বিরোধীদলের নেতাদের শ্রীনগর ভ্রমণে না যাওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।